গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং , জলবায়ু পরিবর্তন
গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং,জলবায়ু পরিবর্তন:
গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং , জলবায়ু পরিবর্তন:
আমাদের পরিবেশের (Greenhouse effect and Global Warming )গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং,Climate Change হল আধুনিককালে বায়ুমণ্ডলের Carbon dioxide, মিথেন , নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, জলীয় বাষ্প থাকে তার মাত্রার পরিবর্তন। Greenhouse Gases এর মাত্রা অতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য গ্যাসগুলি মিলিতভাবে বায়ুমন্ডলে চাঁদোয়ার মতো একটি গ্যাসীয় স্তর সৃষ্টি করে এবং এই স্তর Greenhouse এর মত আচরণ করে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রীন হাউজ প্রভাব বা Greenhouse Effect বলে।
গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং , জলবায়ু পরিবর্তন:(What is Global Warming)
সাধারণভাবে বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক গ্যাসীয় অবস্থায় পৃথিবী ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌর বিকিরণ থেকে যে পরিমান তাপ গ্রহণ করে সেই পরিমাণ তাপকে পৃথিবীপৃষ্ঠ দীর্ঘ তরঙ্গের বিকিরণের মাধ্যমে মহাশূন্যে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এইভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠে তাপের সমতা বজায় থাকে। গ্রীন হাউস গ্যাস গুলির মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির ফলে পার্থিব বিকিরণ রূপে দীর্ঘ তরঙ্গের সবটাই মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না। বায়ুমণ্ডলের এই গ্যাসগুলির স্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় তা পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে এবং বায়ুমণ্ডল কে উত্তপ্ত করে। এভাবে পৃথিবীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা অপেক্ষা উষ্ণতার এই অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming নাম দিয়েছেন।
গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং ,Climate Change (Greenhouse Effect and Global Warming ) সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন ও অবগত করতে হবে। Greenhouse effect and Global Warming ,Climate Change আলোচ্য বিষয় টি পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তেমনি চিন্তার কারণ।
গ্রীন হাউস এর অর্থ (Meaning of Greenhouse)
ইংরেজি শব্দ Greenhouse এর অর্থ হল শীতপ্রধান দেশে উদ্ভিদ প্রতিপালনের জন্য কাচের ঘর । রোদ্রজ্জল শীতের দিনে বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের নিচে থাকলে ও কাচের ঘরের উষ্ণতা 38 থেকে 40 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বজায় থাকে। ফলে উদ্ভিদের জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনের কোন অসুবিধা হয়না। ক্ষুদ্রতরঙ্গের সৌর বিকিরণ কাচের মধ্য দিয়ে সহজেই ওই ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু ওই ঘর থেকে মাটি ও উদ্ভিদ দ্বারা প্রতিফলিত বৃহৎতরঙ্গের তাপীয় বিকিরণ তাদের মধ্যে দিয়ে বাইরের বায়ুমন্ডলে ফিরে যেতে পারে না। ফলে কাচের ঘরের উষ্ণতা বেড়ে যায় ও উচ্চ তাপমাত্রা বজায় থাকে।
বিজ্ঞানের ও সভ্যতার অগ্রগতির জন্য বায়ুমণ্ডলের Carbon dioxide, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন , ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ইত্যাদি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে । এই সমস্ত গ্যাস বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে দিয়ে সূর্য রশ্মি অতি সহজে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু দীর্ঘ তরঙ্গ বা অবহেলিত বিকিরণকে এই সমস্ত গ্যাস শোষণ করে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে, একেই গ্রীন হাউস প্রভাব বলে। এইভাবে পৃথিবী নিজেই একটি গ্রিন হাউস এ পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে একে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলা হয়। Also read - soil pollution
গ্রিনহাউস গ্যাস(Greenhouse Gases)
গ্রিনহাউস গ্যাসের নিচের তালিকা Carbon dioxide সহ অন্যান্য অংশের বিবরণ দেয়া হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা উৎস .Greenhouse Gasses | পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা | উৎস | বায়ুমণ্ডলে বর্তমানে এর পরিমান |
কার্বন-ডাই-অক্সাইড | 49% | জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন কয়লা, খনিজতেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, বনভূমি ছেদন ও ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন ইত্যাদী। | 0.04% |
মিথেন | 18% | গবাদিপশু ও কীটপতঙ্গের আন্ত্রিক পচন,উদ্ভিদে দেহাবশেষের বিয়োজন ও আর্বজনার পচন ,কয়লাখনির ও প্রাকৃতিক গ্যাসের নিঃসরণ | অতি সামান্য |
নাইট্রোজেন অক্সাইড সমূহ | 6% | জৈব ও অজৈব সার , জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে | 78.08% |
ক্লোরোফ্লুরো কার্বন | 14% | এয়ারমোল ,রেফ্রিজারেটর , এয়ারকন্ডিশনিং প্লাস্টিক আঠা,ফোম ও বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে নির্গত হয় | অতি সামান্য |
জলীয় বাষ্প ও ওজোন | 13% | সমুদ্র , নদী , জলাশয় ও বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর | 0- 5 % ওজোন - 0.0006% |
গ্রীনহাউস ইফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গ্যাসের ভূমিকা:
Carbon dioxide -
গ্রীন হাউস প্রভাব সৃষ্টি তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অবদান প্রায় 50 থেকে 60 শতাংশ। এখন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎস হল কার্বন। কার্বনের পরিমাণ সীমাবদ্ধ । প্রকৃতিতে কয়টি প্রাকৃতিক উৎসে অবস্থান এবং একটি উৎস থেকে অন্য উৎসে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। ফলে কার্বনের উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হয়েছে। কিন্তু মানুষ প্রতিবছর প্রায় চার হাজার মিলিয়ন টন কার্বন জ্বালানি পুড়িয়ে বায়ুমণ্ডলের সংযোজিত করছে। তার প্রায় অর্ধেকদ্রবীভূত হয় সমুদ্রের জলে বাকি অর্ধেক বায়ুমন্ডলে।ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন -
গ্রীন হাউস প্রভাব সৃষ্টিতে ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন এর অবদান 15 থেকে 25 শতাংশ। কিন্তু carbon dioxide ও মিথেনের এর চেয়ে ২০ গুন বেশী সক্রিয়।
মিথেন -
মিথেনর প্রতিবছরে বৃদ্ধির হার 1.1 শতাংশ। বায়ুমণ্ডলের সংযুক্তির পরিমান 400 মিলিয়ন টন। গ্রীনহাউসের মিথেনের অবদান 13 শতাংশ।ওজোন -
ওজন গ্যাস পৃথিবীর জীবকুলকে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তবে গ্রীন হাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান কম নয়। এই গ্যাসের পরিমাণ বছরে 0.5 থেকে 2.0 % হারে বাড়ছে।
নাইট্রোজেন অক্সাইড -
নাইট্রোজেন অক্সাইড এর অবদান কম নয়। বেশ সক্রিয়, গ্রীন হাউস প্রভাব সৃষ্টিতে অবদান 5% । গ্যাসটি Carbon dioxide এর চেয়ে 250 গুন বেশী সক্রিয়।Climate Change ফলে 2004 সাল থেকে ইউএসএ তে প্রতিবছর টর্নডো, দাবানল ও খরা ঘটছে। গত দুই দশকে পৃথিবীর তাপমাত্রা দশমিক 6 ডিগ্রি সেণ্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে । পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় বৃষ্টি অরণ্য আমাজন ফরেস্ট আজ ক্ষতির কবলে, এর অনেকাংশ দাবানল সৃষ্টির ধ্বংস হয়েছে।
অঞ্চল বা দেশ নিক্ষিপ্ত গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণের শতকরা হার
শিল্পোন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় অধিক পরিমাণ গ্রীন হাউস গ্যাস উৎপন্ন করে। বায়ুমণ্ডলের মােট নিক্ষিপ্ত গ্রীনহাউস গ প্রায় 67% শিল্পোন্নত দেশের এবং অবশিষ্ট 33% উন্নয়ন
অঞ্চল বা দেশ | নিক্ষিপ্ত গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণের শতকরা হার |
(1) শিল্পোন্নত দেশ (69.95%) | |
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র | 27.44 |
জাপান | 2.51 |
পশ্চিম ইউরোপপ | 11.89 |
পূর্ব ইউরােপ | 4.54 |
সােভিয়েত রাশিয়া (পূর্বতন) | 13.08 |
অস্ট্রেলিয়া | 2.00 |
অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ। | 5.49 |
(2) উন্নয়নশীল দেশ (33.05%) | |
ভারত | 0.01 |
চীন। | 0.57 |
ব্রাজিল | 18.21 |
এশিয়া (জাপান বাদে) | 7.97 |
আফ্রিকা | 3.04 |
অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ। | 3.45 |
উৎসঃ কাউন্সিল অব সায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট (CSE)-এর পরিসংখ্যান
গ্রীনহাউসের প্রভাব
গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি ও ,জলবায়ু পরিবর্তন
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের গড় উষ্ণতা 1.5 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে।বায়ু দূষণ ঘটছে প্রতিনিয়ত । বিশেষভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঞ্চয় যদি আরো বাড়ে তাহলে গড় উষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পাবে। ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জ রিপোর্ট অনুযায়ী জানুয়ারি 2005 পর্যন্ত বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ 379 পিপিএম এবং বছরে প্রায় দুই পিপিএম করে এর সঞ্চয় বাড়ছে। এরপর পৃথিবীতে গড় তাপমাত্রা এমন এক চরম সীমায় পৌছে যাবে যাতে, শুধু জলীয় জলবায়ু পরিবর্তনে নয় আরো অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটবে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে 2030 সালে দেশের প্রায় 17% ভূমিভাগে খাদ্যাভাব আরো চরমে পৌছাবে।হিমবাহের গলন
হিমবাহের গলনে ফলে সমুদ্র ফুলে উঠবে এবং জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে এর ফলস্বরূপ চক্র ব্যাহত হবে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটবে নিচু অংশ জলমগ্ন হবে খাদ্যাভাব প্রভৃতি ঘটবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ভুমধ্যসাগরের 15% উপকূলবর্তী নিম্নভূমি জলমগ্ন হবে।দাবানল
উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে গাছে গাছে ঘষা লেগে দাবানলে মাধ্যমে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হবে যেমন ব্রাজিলের পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন বৃষ্টি অরণ্যে দাবানলের ঘটনা. উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বৃষ্টি বাতাস ও মৃত্তিকা জলের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং ভৌম জলের ভাণ্ডার পড়বে
জলজ বাস্তুতন্ত্র
সমুদ্র জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হতে পারে না হলে মারা যাবে বাস্তুতন্ত্রের নষ্ট হবেগ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা:
1992 সালের ইণ্ডিয়াতে পরিবেশ সংক্রান্ত সম্মেলন এর নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলি হল -- জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে।
- কয়লা , পেট্রোল প্রকৃতির ব্যবহার যথাসম্ভব কম ব্যবহার করে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ করতেই হবে।
- অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে ।
- সৌরশক্তি, জোয়ার-ভাটা , বায়ুশক্তি , ভূতাপীয় শক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।
- ফ্উরেয়ন গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে।
- উৎসাহ দান করে বৃক্ষরোপণের দিকে নজর দিতে হবে যাতে গাছপালা বাতাসের উপাদানগুলি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
- প্রযুক্তির উন্নতি করতে হবে ।
- শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের দক্ষতা বাড়িয়ে পেট্রোল-ডিজেলের প্রকৃতি জ্বালানির অপচয় ব্যবহার কমিয়ে বাতাসে কমাতে হবে।
- বিক্রিয়া করন উৎপাদনকারী আবর্জনা,বর্জনীয় পদার্থ গুলি সঠিক প্রক্রিয়া ঘটিয়ে বায়ুমণ্ডলের সঞ্চয় কমাতে হবে।
- পরিবর্তিত পদার্থের ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে ।
- জনগণকে সচেতন করতে হবে , গবেষণায় উৎসাহদান , গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে , যাতে বিকল্প উপায়ে যন্ত্রপাতি বানানো যায়।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী
সাধারণত বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, প্রভৃতি গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা উষ্ণতার বর্তমান অবস্থাকে বলা হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং(Global Warming)।গ্রিনহাউস প্রভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন:
পরিবেশের উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব খুবই ক্ষতিকারক বিশ্ব উষ্ণায়ন জলবায়ু পরিবর্তনের সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গ্রীন হাউজ প্রভাব এর ফলাফল ও বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিবেশগত প্রভাব এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।- সমুদ্রে জলসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি।
- জলবায়ু ভয়ঙ্কর পরিবর্তন।
- বিভিন্ন রোগের প্রকোপ।
- ফসল উৎপাদনে প্রভুত ক্ষতি।
- ভৌম জলের যোগানে সমস্যা।
- উদ্ভিদের প্রাণিজগতের ক্ষতি।
- বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য হারানো।
A.B.Piltock (1972) এর মতে গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কয়েক গুন বেড়ে গেলে কৃষি ও মানব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে ।
সমুদ্রে জলসীমার উচ্চতা বৃদ্ধি -
দুই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সুমেরু কুমেরু অঞ্চলে বরফ গলে যাবে ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বাড়বে এবং ফলস্বরূপ পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নভূমি জলমগ্ন হবে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ালে সুমেরু কুমেরু অঞ্চল আংশিক বা পুরোপুরি গলে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান।মরুকরণ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মরু অঞ্চল গুলি যেমন আরো বেশী উত্তপ্ত ও শুষ্ক হবে ঠিক তেমনি অত্যাধিক উষ্ণতা অসুস্থতাজনিত কারণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উদ্ভিদের বিনাশ ঘটে মরু অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটবে । এর ফলে সমুদ্র জলের উচ্চতা 2021 সালের মধ্যে 50 সেন্টিমিটার বাড়বে। ভারত-বাংলাদেশ মালদ্বীপ মিশর প্রভৃতি দেশে বহু এলাকা জলের তলায় তলিয়ে যেতে পারে।ফসল উৎপাদনে প্রভুত ক্ষতি -
লবণাক্ত জল স্থলভাগকে জলমগ্ন করলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাবে । ফলে কৃষিজমি কমার কারণে ফসল উৎপাদন কমবে ও সমুদ্রের লবণাক্ত জলের কৃষি জমিতে চাষের অনুকূল যুক্ত করে তুলবে,জোয়ার বাজরা প্রভৃতি উৎপাদন বাড়লেও ধান গম ও পাট ফসলের উৎপাদন কমে যাবে ফলে প্রধান খাদ্য উৎপাদনের হার কমে যেতে পারে এছাড়া কৃষি জমির আয়তন কমে যাবে ও কৃষি ক্ষেত্রে আগাছা বেশি হবে । সামগ্রিকভাবে কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ ও জমির উৎপাদনশীলতা কমবে।এর ফলে ফসল উৎপাদনের বিঘ্ন ঘটবে ও খাদ্য সমস্যা দেখা দেবে এবং দুর্ভিক্ষে হতে পারে।ভৌম জলের যোগানে সমস্যা -
সমুদ্রপৃষ্ঠের জলতল চার ফুট বাড়লে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় 60 শতাংশ তাদের বাসস্থান হারাবে।তাপমাত্রা বাড়লে পৃথিবীর স্থলভাগের বহু অঞ্চল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে এবং ফলে অনেক উন্নত কৃষি প্রধান অঞ্চলে মৃত্তিকা মধ্যস্থ ভৌম জলের পরিমাণ কমে যাবে । খরা দেখা দিতে পারে এবং শস্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।এছাড়া পানীয় জলের সংকট ঘটবে .
বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য হারানো -
কার্বন ডাই অক্সাইডের এর পরিমাণ বাড়লে সমুদ্র দূষণ,শোষণ এবং বিয়োজন অধিক হবে যাতে সমুদ্র জলের অম্লতা স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে.জলবায়ু ভয়ঙ্কর পরিবর্তন -
বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের এর পরিমাণ বাড়লে বায়ুমন্ডলীয় চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং পরোক্ষভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর তাপের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে । বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুসারে দক্ষিণ গোলার্ধে তুলনায় উত্তর গোলার্ধ বেশি উষ্ণ হয়ে উঠবে কারণ দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি, গ্রীন হাউস গ্যাস গুলি বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগে তীব্রতা বাড়বে।জলবায়ুগত পরিবর্তন বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর নানা রকমের পরিবর্তন ঘটবে যেমন অতিবৃষ্টি জনিত বন্যা অনাবৃষ্টি খরা দীর্ঘায়িত গ্রীষ্মকাল বজ্রপাত বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় ঘূর্ণবাত জনিত ঝড় সাইক্লোন টাইফুন টর্নেডো প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবেবিভিন্ন রোগের প্রকোপ -
জীবদেহে রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু , জ্বর , চর্মরোগ, চক্ষুরোগ , ক্যান্সারজাতীয় বহু ভয়াবহ ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং( Effect and Global Warming) এর ফলে।
উদ্ভিদের প্রাণিজগতের ক্ষতি -
ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বাড়লে অসংখ্য প্রজাতির চিরতরে বিলুপ্ত হবে। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ জনিত সিদ্ধান্ত অনুসারে
বায়ুমন্ডলে বর্তমান গড় তাপমাত্রা 3 ডিগ্রী সেণ্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেলে 44% স্তন্যপায়ী 23% পাখির প্রজাতি ও কীটপতঙ্গ বিলুপ্ত হবে।
গ্রীন হাউজ প্রভাব ও বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর উপায় সমূহঃ
- কয়লা পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের অতিরিক্ত পরিমান কমবে।
- অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি যেমন সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি , জোয়ার ভাটা শক্তি , ভূতাপীয় শক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে।
- ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন এর উৎপাদন ও ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে
- চোরাই কাঠ কাটা বন্ধ করতে হবে বনভূমি রক্ষা করার জন্য কাঠের পরিবর্তিত দ্রব্য জনপ্রিয় করতে হবে।
- বনসৃজন করতে হবে কারণ গাছপালা অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
- জ্বালানির অপচয় ও ব্যবহার কমানোর জন্য মোটরগাড়ি, ট্রাক ,রেলগাড়ি প্রভৃতি যানবাহন ইঞ্জিনের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
- বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের যোগান কমানোর জন্য গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
- জনগণকে Green House Effect and Global Worming বৃদ্ধির কুফল সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে।
- মন্ট্রিল চুক্তি , কিয়োটো চুক্তি এবং ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন উন্নয়ন প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।
আর্সেনিক ও আর্সেনিক দূষণ (What is Arsenic and Arsenic Pollution)?
উপসংহার(Conclusion):
একটা বিষয়ে আমরা সবাই একমত যে এই পৃথিবীতে আমরা সবাই সুস্থভাবে বাঁচতে চাই কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ ও যে প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা এখনও সবাই সচেতন নয় এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি গুরুত্ব দায়িত্ব রয়েছে তারা বয়সে তরুণ তাদের দেহ মনে আছে অদম্য প্রাণশক্তি কোন আদর্শকে সামনে রেখে এগোতে চাই তাই তারা এগিয়ে চলে চারপাশের মানুষকে গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং , জলবায়ু পরিবর্তন (Greenhouse effect and Global Warming ,Climate Change)বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে।আরো একটি সক্রিয় পদক্ষেপ সরকারকে দরকার তা হলো বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতা সার্বিক প্রসার জ্ঞান ও গ্রীন হাউস এফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং , জলবায়ু পরিবর্তন ( Greenhouse effect and Global Warming ,Climate Change) সম্পর্কে সম্যক ধারণা পরিবেশ ও পরিবেশ এর উপযোগিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে অগ্যতা জনিত অপরিণামদর্শিতা অপকর্ম লোপ পাবে তার শুভবুদ্ধির জাগ্রত হবে সুস্থ পরিবেশ মানুষের বসবাসযোগ্য ভূমি হবে এইজন্য বিশ্বের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে
তথ্যসূত্র -
- আধুনিক ভূগোল, হাজরা যুধিষ্ঠির , অধ্যাপক দাস দুলাল , কলেজস্ট্রিট , কলকাতা ৭০০০৭৩ ,
- নবীন কুন্ডু লেন ,প্রথম প্রকাশ অক্টোবর ২০০৫
- উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সহায়িকা , সম্পাদনায় কালীপদ চৌধুরী ,
- বাণী সংসদ , পাবলিশিং হাউস প্রা। লি , রমানাথ মজুমদার স্ট্রীট
- ভূগোল ও পরিবেশ , দুলাল দাস ,ছায়া প্রকাশনী , এক নম্বর বিধান সরণি
- জলবায়ু বিজ্ঞান , ইন্দ্র কুমার চ্যাটার্জী ,কলেজস্ট্রিট , কলকাতা ৭০০০৭৩ ,
- উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল পরিচয় , ডক্টর অনীশ চট্টোপাধ্যায় ও সুজিত ভট্টাচার্য ,ABS পাবলিশিং হাউস, দ্বাদশ শ্রেণী ,
- ভূগোল সহায়িকা , রায় ও মাটিন , ষষ্ঠ শ্রেণি
- সঞ্চিতা মন্ডল সরকার M.A ( Geography).B.U & M.A (Education)
আরো পড়ুন :-
জল দূষন (water pollution )
CORD BLOOD BANKING SREVICES.
BEST PLACE VISITE IN TARAPITH
Caused and effect of sound pollution
- ছবি- pixabay.com
POST টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।POST টি যদি ভালো লেগে থাকলে comment ও share করার অনুরোধ রইল।
কোন মন্তব্য নেই