শব্দ দূষণের কারণ কী?
শব্দ দূষণের কারণ কী?
শব্দ দূষণের কারণ কী?
শব্দ(Definition of Sound):-কম্পনশীল কোন বস্তু থেকে যে শক্তি জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে পৌঁছে এক বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে বা জাগায় তাকে শব্দ বলে । শব্দ এক প্রকার শক্তি, যা তরঙ্গের আকারে উৎস থেকে ছড়িয়ে পড়ে ।
আমরা যেভাবে শব্দ শুনি তা হল -
শব্দ> কর্ণছত্র >কর্ণকুহর> পর্দা>মেলিয়াস> ইনকাস >স্টেপিস >ককলিয়া> কর্টি যন্ত্র >অডিটরি স্নায়ু>বিশেষ অনুভূতি।
শ্রুতিগোচরশব্দ-
কোন শব্দ উৎসের কম্পন সেকেন্ডে কুড়ি থেকে কুড়ি হাজার বারের মধ্যে হলে তা আমরা শুনতে পাই ,একে শ্রুতিগোচরশব্দ বলে ।
শব্দেতর শব্দ-
যে শব্দের উৎসের কম্পন সেকেন্ডে ২০ বারের কম হলে একে শব্দেতর শব্দ বলে।
শব্দোত্তর শব্দ -
শব্দের উৎসের কম্পন সেকেন্ডে কুড়ি হাজার বারের বেশি হলে শব্দোত্তর শব্দ বলে ।
শব্দ কে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি যেমন সুরযুক্ত শব্দ ও সুর বর্জিত শব্দ।
সুরযুক্ত শব্দ শ্রুতি মধুর হয় কিন্তু সুর বর্জিত শব্দ একটানা চললে কোলাহল বলে তখন আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
শব্দ দূষণ(Definition of Noise Pollution) :-
উচ্চ প্রাবল্যের ও উচ্চতা তীব্রতা বিশিষ্ট সহন সীমার ঊর্ধ্বে সুর বর্জিত কর্কশ শব্দ দ্বারা পরিবেশের এবং মানব দেহের ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় পরিবর্তনকে শব্দ দূষণ বলে ।
শব্দের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে
১>প্রাবল্য বা তীব্রতা ২>তীক্ষ্ণতা ৩>গুন বা জাতি ।
শব্দের তীব্রতা পরিমাপের প্রচলিত একক হল ডেসিবেল।
আবিষ্কর্তা হলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
আই এস আই M(ISI) এর চার্ট অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে আসা শব্দের মত মাত্রা হওয়া উচিত 20 db - 60 db । 65 ডেসিবেল এর বেশি শব্দকে কোলাহল বা Noise বলে। শব্দের ডেসিবেল স্কেলে 0 থেকে 140 পর্যন্ত ভাগে ভাগ করা আছে।
আবিষ্কর্তা হলেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
আই এস আই M(ISI) এর চার্ট অনুযায়ী বিভিন্ন উৎস থেকে আসা শব্দের মত মাত্রা হওয়া উচিত 20 db - 60 db । 65 ডেসিবেল এর বেশি শব্দকে কোলাহল বা Noise বলে। শব্দের ডেসিবেল স্কেলে 0 থেকে 140 পর্যন্ত ভাগে ভাগ করা আছে।
শব্দের স্থিতিকাল-
অবিরাম শব্দ-
এই শব্দ কোন ব্যাঘাত বা বাধার সৃষ্টি করে না ,যতক্ষণ এই শব্দ 5 ডেসিবেল এর কম থাকে। উদাহরণ -ঘুরন্ত পাখা
সবিরাম শব্দ-
এই শব্দ একটানা এক সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। উদাহরণ- দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত ড্রিলিং মেশিন
বিচলন কারী শব্দ-
এই শব্দ তীব্র ভাবে হয় সেকেন্ডেরও কম সময় ধরে হয়
উদাহরণ –বোমা -190 db, বন্দুকের আওয়াজ 140-170db ,বাজি 125-160 db
শব্দ দূষণের উৎস (Source of Noise Pollution) -
শব্দ দূষণের প্রধান কারণ বা উৎস গুলি নিম্নরূপ-
যানবাহন দ্বারা সৃষ্ট শব্দ দূষণ-
শব্দ দূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো যানবাহন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে যানবাহন থেকে শব্দ দূষণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বাস ,লরি ,মোটরগাড়ি, ট্রাম্প, রেল, এরোপ্লেন , সুপারসনিকজেট প্লেন চলাচলের সময় যে শব্দ সৃষ্টি হয় তা শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে। তাছাড়াও এদের বিভিন্ন প্রকার বৈদ্যুতিক হর্নের তীব্রতা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে । হাসপাতাল বিদ্যালয় ও অন্যান্য শান্ত নীরব কর্মব্যস্ত স্থানে শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে।
হু (WHO)এর রিপোর্ট অনুযায়ী ট্রাফিক শব্দ হল বায়ু দূষণের পরে দ্বিতীয় সর্বাধিক দূষণ (Pollution) কারক । কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB বা Central Pollution Control Board) যানবাহন জনিত শব্দ দূষণ মাত্রা 70 db (ডেসিবেল) নির্ধারণ করলেও বহু শহরে শব্দের মাত্রা আরো বেশি।
রেল পরিবহনের মাধ্যমে-
রেলগাড়ি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সময়, স্টেশনে যাত্রী নামা ওঠার সময় ,রেলে সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন রকম যান্ত্রিক কাজ ও পরিষেবার সময় শব্দ দূষণ ঘটে। ট্রেনের বাঁশি বহুদূর পর্যন্ত যায়, যাদের স্টেশনের কাছে বাড়ি তারাই দূষণের প্রকোপে পড়ে।
শিল্প মারফত শব্দ দূষণ-
বিভিন্ন কল কারখানায় দ্রব্য উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে সৃষ্ট আওয়াজ মারাত্মক শব্দ দূষণ ঘটায়। যে যন্ত্রের আওয়াজে কারখানার শ্রমিক সহ কারখানা অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষজন এর মধ্যে শব্দ দূষণের প্রকোপে পড়ে।
ভারতের শিল্প ক্ষেত্রে 8 ঘণ্টা করে সর্বাধিক 90 ডেসিবেলের শব্দ সহনসীমা নির্ধারিত হলেও কিন্তু জাহাজ শিল্প ,ইঞ্জিয়ারিং শিল্প ,স্থাপত্য নির্মাণ শিল্প ,ধাতব্য পণ্য উৎপাদন ,খাদ্য উৎপাদন শিল্প, টেক্সটাইল লুম ,নিউজ পেপার প্রেস ,চাবি পাঞ্চিং মেশিন ,গাড়ী সারাই কারখানা শিল্পে সহনশীল মাত্রা থেকেও বেশি প্রাবল্যের শব্দ ,শব্দ দূষণ ঘটায়।
প্রাকৃতিক কারণে শব্দ দূষণ-
নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শব্দ দূষণ ঘটে। যেমন বজ্রপাতের সময় প্রচন্ড শব্দ উৎপন্ন হয়।
বিমান পরিবহন এর মাধ্যমে-
হেলিকপ্টার ,এরোপ্লেন ,জেট প্লেন প্রভৃতি আকাশে ওড়ার সময় ও ওঠা নামার সময় প্রচন্ড শব্দ হয় ফলে আশেপাশের এলাকায় শব্দ দূষণ ঘটে।
যান্ত্রিক ক্রিয়াঘটিত দূষণ-
যান্ত্রিক ক্রিয়াঘটিত দূষণ-
বুলেট চালিত জেনারেটর, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ,ওয়াশিং মেশিন ,ইয়ার কুলার ,মিক্সি মেশিন, গম ভাঙানোর মেশিন ,ধান ছাড়ানো মেশিন ,রাইস মিল শিল্পেও উৎপন্ন শব্দ স্থানীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শব্দ দূষণ ঘটায়।
কথোপকথনের মাধ্যমে-
বিভিন্ন অফিসের শেয়ারবাজারে ,মিটিং, মিছিল জমায়েত স্কুল, কলেজ ,কোন অনুষ্ঠানে প্রচুর লোকজন একসঙ্গে সমবেত হলে শব্দ দূষণ উৎপন্ন হয়।
সামাজিক কারণে শব্দ দূষণ-
কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রবীন্দ্রজয়ন্তী ,প্রজাতন্ত্র দিবস ,কোন পূজা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠান ,বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে ,মাইক বাজানো হয় ও সাউন্ড সিস্টেমের মধ্যে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তা শব্দ দূষণ ঘটায়।
বাজি পটকা থেকে শব্দ দূষণ- আজকাল প্রত্যেক অনুষ্ঠান বাজি পোড়ানো বিশেষ যে কোন অনুষ্ঠানে আতশবাজি শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে।
শব্দ দূষণের প্রভাব(Effect of Sound Pollution):-
শব্দ দূষণ মানব স্বাস্থ্যের উপর বা মানব জীবনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অত্যাধিক শব্দের ফলে মানুষের মনের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক হয়, অনেক সময় শব্দ দূষণের ফলে মানব দেহে স্থায়ী বা অস্থায়ী শারীরিক বা মানসিক রোগ সৃষ্টি হয় যেমন-
শ্রাবণ যন্ত্রের উপর প্রভাব-
কোন কারনে উচ্চ মাত্রার শব্দ কানের স্থায়ী ক্ষতি করে।এককালীন আচম্বিতে শব্দ শুনলে অন্তঃকর্ণের ককলিয়া অংশে স্থায়ীভাবে শ্রবন ক্ষমতা নষ্ট হয়, একে অ্যাকাউষ্টিক ট্রমা বলে।
দীর্ঘ সময় ধরে 100 ডেসিবেল শব্দের মধ্যে থাকলে ব্যথা সৃষ্টি হয় এমনকি অর্গান অফ কর্টি যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবন ক্ষমতা হ্রাস পায় বা বিনষ্ট হয় একে নয়েস ইনডিউসড হেয়ারিং লস (NIHL)বলে ।
অনেক সময় জেট বিমানের শব্দ, মাইকের আওয়াজ প্রভৃতি শ্রাবণে বাধা সৃষ্টি করে একে মাস্কিং বলে।
90 ডেসিবেল এর মধ্যে শব্দ হলে হৃদপিন্ডের সিস্টোলিক রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
অনবরত 60 ডেসিবেল শব্দ শুনলে হৃদপিন্ডের মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এই রোগে হৃদ পেশিতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় পেশির এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়।
শ্বাস প্রশ্বাসএর প্রভাব-
এই দূষণের ফলে বহু মানুষের মধ্যে শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া ব্যাহত হয়।শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তিত হতে থাকে ,উচ্চ মাত্রার শব্দের ফলে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চলতে থাকে।
মস্তিষ্কের উপর প্রভাব-
60 ডেসিবেলের উপর দিয়ে একটানা শব্দ শুনলে মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড কে প্রভাবিত করে, মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ,অনেক সময় উচ্চ মাত্রার শব্দ স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে ,মানসিক অবসাদ দেখা যায়,বমি ভাব দেখা যায় যাই,অনিদ্রা দেখা যায়, ফলে শরীরের স্বয়ংক্রিয় নার্ভতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ হয় না হয় না।
মানব চক্ষুর ওপর প্রভাব-
মানব চক্শষুর উপর শব্দ দূষণের ফলে অনেক সময় অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল লক্ষ্য করা যায় এবং উপযোজন ব্যাহত হয় ।এমন কি অনেক সময় তারারন্ধ্রের সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বন্য প্রাণীর উপর প্রভাব-
বন্যপ্রাণীরা শব্দ দূষণের ফলে মানুষের থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্য পরিবেশে অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি হলে শিকারে অসুবিধা হয় এবং শব্দ দূষণের ফলে তারা যোগাযোগ রাখতে পারে না ও বন্যপ্রাণীরা আক্রমনাত্মক হয়ে পড়ে।এতে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয় তাছাড়া উচ্চ শব্দে ইুঁদুরের ভ্রুণের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সর্বোপরি বন্য পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হয়।
পাখির উপর শব্দ দূষণের প্রভাব –
উচ্চ মাত্রার শব্দ বিশিষ্ট কোলাহল হলে পাখিরা সেই স্থান ছেড়ে চলে যায়। বিশেষ করে তাদের প্রজননে অসুবিধা হয়। পরিযায়ী পাখিরা সেই স্থানে আর আসে না।
পরিবেশের উপর প্রভাব -
শব্দ দূষণের ফলে বহু প্রাণী ও পাখির নতুন অপত্য সৃষ্টি তে বাধা পায। তারফলে অনেক পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। প্রজননের অভাবে অনেক পশু পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে,সেজন্য পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় ও তার প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়ে।
[…] Also read – sound pollution […]
ReplyDelete[…] শব্দ দূষণের কারণ কী? […]
ReplyDelete