মাটি দূষণ ( soil pollution)
মাটি দূষণ ( soil pollution)

Soil, soil pollution,types of soil pollution, causes of soil pollution, source of soil pollution, component of soil, pesticide, effects of soil pollution,etc মাটি দূষণের ধরন , মাটি দূষণের কারণ,মাটি দূষণের ফল, মাটির উপাদান, কীটনাশক দূষণ, ইত্যাদি।
TYPES OF SOIL POLLUTION (মাটি দূষণের ধরন)
ভূমিকা -
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অবাঞ্ছিতপদার্থ সমূহ পরিবেশের গুণগত মান কে নষ্ট করে তখন তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশের সাথে মানুষ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। পরিবেশ মানুষের চাহিদা পূরণ করে এসেছে ,কিন্তু মানুষের চাহিদা এতই দিনকে দিন বেড়ে চলেছে যে,পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং দূষিত হচ্ছে পরিবেশের প্রতিটি উপাদান । মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তার ঋণাত্মক প্রভাব মানব জাতির উপর প্রভাব এসে পড়ছে। আমাদের চারপাশে গাছপালা নদী-নালা পশুপাখি প্রকৃতি সমস্ত কিছু নিয়ে পরিবেশ গঠিত হয়। এই পরিবেশে প্রধান দুটি উপাদান হলো জীব ও জড় উপাদান এবং জীবজগতের মধ্যে প্রধান হল মানুষ আর মানুষই আজ এই পরিবেশকে বিপদের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।
মাটি দূষণ;
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান এর মধ্যে মৃত্তিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মৃত্তিকার ওপর নির্ভর করে এইসমস্ত জীবজগৎরয়েছে। মৃত্তিকা কে ব্যবহার করে সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ। সম্পাদিত করে থাকেজীবনক্রিয়া, সেই অর্থে মৃত্তিকা কে মা বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেই মাকে আজকাল সমস্ত প্রাণী বিশেষ করে মানুষ দূষিত করে তুলেছে। এত মাত্রায় অবাঞ্ছিত পদার্থ মাটিতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে যে মৃত্তিকার সমস্ত গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি দূষিতহয়ে পড়ছেবিভিন্ন ভাবে । জৈবও অজৈব পদার্থেরমাধ্যমে জমিবা মাটি ক্রমাগতপ্রাকৃতিক ভারসাম্যহারিয়ে ফেললেমানুষের বসবাসেরঅযোগ্য ও উদ্ভিদপ্রজাতির ব্যবহারেরঅযোগ্য প্রাণীপ্রজাতি ব্যবহারেরঅযোগ্য হয়েউঠলে সেইমাটি কে বিষাক্তমাটি বলাহয় এই অবস্থাকেমৃত্তিকা দূষণও বলে।
মৃত্তিকা (Soil) –
মাটি পৃথিবীর এমন এক স্তর যেখানে উদ্ভিদ জন্মায় ও পুষ্ট হয়, সেই কারণে মাটি একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ । পৃথিবীপৃষ্ঠে গড়ে 10-25 সেমি. পর্যন্ত মৃত্তিকাস্তর অবস্থান করে ।এক ইঞি স্তরের সৃষ্টি হতে সময় লাগে প্রায়500-1000 বৎসর । কিন্তু প্রাকৃতিক বা মানবিক কারণে এই কলাস্তরের অপসরণ বা মৃত্তিকার গঠনগত পরিবর্তন ঘটে, যাকে ভূমিক্ষয় বলে ।
মৃত্তিকার উপাদানসমূহ(Constituents of Soil) :
মৃত্তিকা হল জৈব ও অজৈব পদার্থের সংমিশ্রণ । তার মধ্যে প্রধান উপাদানগুলি কণা আকারে অবস্থান করে যেমন -খনিজ পদার্থ(Minerals), হিউমাস(Humus) বা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ, জল (Water), গ্যাসীয় পদার্থ (O2, CO2) অণুজীব পদার্থ(Micro-organism)
মাটিদূষণ(Soil pollution):
প্লাস্টিক, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, দৈনন্দিন আবজর্না, ব্যাকটেরিয়া, প্রােটোজোয়া ইত্যাদি দূষক মাটিতে মিশে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিন্যস্ত মাটির স্তরের যে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর পরিবর্তন বা ক্ষয় সাধিত হয় তাকে মাটিদূষণ বলে।। অথবা
মৃত্তিকাদূষণ(Soil Pollution) ভূমিক্ষয় ও মৃত্তিকার সঙ্গে যখন অনির্দিষ্ট অনুপাতে রাসায়নিক পদার্থ, বিভিন্ন দূষিত পদার্থ যুক্ত হয়ে মৃত্তিকার উর্বরতা নষ্ট বা পরিবর্তন করে তখন তাকেSoil Pollution বা মৃত্তিকা দূষণ
মৃত্তিকা দূষণের কারণ বা উৎস(Source of Soil Pollution) -
মৃত্তিকা দূষণের প্রধান উৎসগুলি হল—
মানুষ ও জীবজন্তুর কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ , রাসায়নিক কার্যকলাপের জন্য শিল্পকারখানা থেকেও বায়ুতে গ্যাসীয় পদার্থ নিক্ষপ করা হয় ,কয়লা ও অন্যান্ন খনিজ পদার্থের প্রক্রিয়াকরণের বর্জ্য পদার্থ মাটিতে জমা করা, গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পদার্থ মাটিতে নিক্ষেপ করা ,তজস্ক্রিয় পদার্থ -হাসপাতাল, শিল্পকারখানা ও গবেষণাগার থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের মাটিতে নিক্ষেপ করা, রাসায়নিক পদার্থ যেমন— কীটপতঙ্গ নাশক, জীবাণুনাশক,অ্যাসিড যুক্ত পদার্থ জমি ও উদ্ভিদে প্রয়োগ করা ,ত্রুটিপূর্ণ কৃষিকার্য, অপরিকল্পিত জলসেচ, বৃক্ষচ্ছেদন ও ভূমিক্ষয় ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত উড়ে আসা ছাই(Fly Ash) ইত্যাদি ।
মৃত্তিকা দূষণেরপদার্থ ও তাদের প্রভাব(Soil Polluting Agencies and their Effects):
একাদূষণের জন্য দায়ী পদার্থগুলির বিবরণ ও তাদের প্রভাব নীচে দেওয়া হল
তরল বর্জ্য(Liquid Waste) ও তরল বর্জ্য বলতে বোঝায় গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার বর্জ্য ও দূষিত জল ।তরলে কঠিন বা অর্ধকঠিন পদার্থ প্রলম্বিত বা কলয়ডীয় অবস্থায় অবস্থান করে ।তরল বর্জ্য যদিপরিবেশ বা সরাসরি মাটিতে ফেলা হয় বা জলসেচের কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে মাটির নানাবিধ পরিমান মৃত্তিকাদূষণ বা Soil Pollution ঘটে। কঠিন বর্জ্য(Solid Waste) গ্রাম ও শহরাঞ্চলে প্রতিদিন মাথাপিছু গড়ে প্রায় 4০০গ্রাম দূষণকারী পদার্থ মাটিতে ফেলা হয় । কঠিন বর্জ্য হল মানুষের বর্জিত অনাবশ্যক ও অবাঞ্ছিত কঠিন বা অর্ধকঠিন ।ইহা বিভিন্ন পদার্থের সংমিশ্রণ ।যেমন—পলিথিন ব্যাগ, ভাঙা কাচ, লোহার টুকরো, আবর্জনা, ঔষধ, ব্যাটারি ইত্যাদি জৈব ওঅজৈব কঠিন পদার্থ এবং হাসপাতাল ও পৌর আবর্জনা ।
শিল্পজাত বর্জ্য(Industrial Waste) –
এই শিল্পজাত বর্জ্য শিল্পকারখানায় প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক বর্জ্যদূষিত জল ও কঠিন বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয় । এই বর্জ্য পদার্থগুলি যদি অশোধিত অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়বা মাটির সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে মাটির গুণমানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে । যেমন—
(i) কাগজ, বস্ত্র, সার, ইস্পাত, কীটনাশক প্রভৃতি উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা থেকে ধাতব তেল, গ্রিজ, ভারী ধাতু, প্লাস্টিক, ভাসমান কঠিন জৈব ও অজৈব পদার্থ, অভঙ্গুর(nonbiodegradable) উপাদানসমূহ মাটিতে যুক্ত হয় ।
(ii) শিল্পকেন্দ্র থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য জল প্রচুর রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু বহন করে এবং এইঅবস্থায় জমিতে এগুলির ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর ।
(iii) প্রতি বছর পৃথিবীব্যাপী70 মিলিয়ন জৈব রাসায়নিক মাটিতে যুক্ত হয় । মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার বা জীবানুরদ্বারা দূষিত পদার্থ ,অ্যামাইনো অ্যাসিড,
অ্যালবুমিন ও জিলেটিনের বিয়োজনের ফলে সালফার ও ফসফরাস যৌগ উৎপন্ন হয় । এগুলি থেকে হাইড্রোজেন সালফাইড(H,S), সালফার ডাইঅক্সাইড(SO2) ও ফসফরাসের বিক্রিয়া করে ।
(iv) ধাতব উপাদানগুলি; যেমন—পারদ(Hg), সিসা(Pb), দস্তা(Zn),আর্সেনিক(As),ক্যাডমিয়া (Cd),ক্রোমিয়াম (Cr),তামা (Cu)ইত্যাদি মাটির মধ্যে অবস্থানরত সাহায্যকারীব্যাকটেরিয়াগুলিকেনষ্ট করে । ভারী ধাতব উপাদানগুলি দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে অবস্থান করলে মাটির জৈব উপাদানগুলি বিনষ্ট হয়। কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য জলের মধ্যে দ্রবীভূত লবণ উপস্থিত থাকে যা দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে আল মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ে ।রাসায়নিক কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য জলের দ্বারা মাটি অত্যন্ত আম্লিক ও ক্ষারীয় হয়ে পড়ে। সেচযোগ্য কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পায় ।
কীটনাশক(Pesticides) -
কীটপতঙ্গ, পঙ্গপাল, জীবাণু, ওষধি নাশক হিসাবে যেসকল রাসায়নিকআবাহার করা হয় সেগুলিকে কীটনাশক বাPesticide বলে । শস্যের রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং কীটপতঙ্গ, পঙ্গপাল প্রভৃতির আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে কীটনাশকের ব্যবহার অপরিহার্য ।
প্রচলিতকীটনাশক(Pesticides) গুলির মধ্যে Cl যুক্ত হাইড্রোকার্বন যেমন– D.D.T., B.H.C., ডিলড্রিন, এনড্রিন এবং বিয়ানা, ম্যালাথিয়নের ন্যায় জৈব ফসফরাস যৌগ উল্লেখযোগ্য । ই কীটনাশক যৌগগুলিতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি বিপজ্জনক ধাতু অবস্থান করে এবং মাটিতে এই ধাতুগুলি স্থায়ীভাবে যুক্ত হয়ে মৃত্তিকাদূষণ বাSoil Pollution ঘটায় । জমিতে কীটনাশকগুলি ব্যবহারের পর অবশিষ্টাংশ মাটিতে সঞ্চিত হয়ে শস্যগুলিকে ও বিষাক্ত করে তোলে । কীটনাশকগুলি জৈব ও রাসায়নিক বিয়োজনের মাধ্যমে(Biodegradation & chemicial degradation) মাটিতে যুক্ত হয় ও স্থায়িভাবে মাটিকে অনুর্বর করে তোলে ।
বিষাক্ত অজৈব রাসায়নিকসমূহ(Toxic Inorganic Chemicals) ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পজাত পদার্থযেমন—
সার, ইস্পাত, কীটনাশক, ক্ষার ইত্যাদি , যেসকল বর্জ্য মাটিতে নিক্ষিপ্ত হয় তা অত্যধিক বিষাক্ত যৌগ পদার্থ; মাটিকে ভীষণভাবে দূষিতকরে।
উল্লেখযোগ্য বিষাক্ত অজৈব যৌগ পদার্থগুলি হল—
মুক্ত ক্লোরিন, ক্লোরোঅ্যামিন, হাইড্রোজেন সালফাইড(HS), অ্যামোনিয়া(NH3) এবং বিভিন্ন ধাতুর লবণ; যেমন—ক্রোমিয়াম(Cr), সিসা, নিকেল(Ni), তামা(Cu), ইউরেনিয়াম(U), পারদ(Hg), রূপা(Ag), দস্তা(Zn) প্রভৃতি ।জালানির দহনে উৎপন্ন সালফার ডাইঅক্সাইড(SO2)।
সর্বশেষে সালফেটে পরিণত হয় ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড(NO2) সর্বশেষে নাইট্রেটে পরিণত হয়েমাটিতে না হয় বায়ুমণ্ডল যুক্ত (deposit) হয় ।
অটোমোবাইল ইঞ্জিন থেকে নির্গত পরিত্যক্ত পদার্থের সূক্ষ সূক্ষ কণা মাটিতে থিতিয়ে পড়ে ।
লেড ও জিঙ্ক খনি থেকে উৎপন্ন লেড ও জিঙ্ক খুব বেশিমাটিতে মিশ্রিত হয় ।
এই সকল পদার্থ মাটির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করে, ফলে এক সময় মাটির উর্বরতা লোপ পায় ।
বিষাক্ত জৈব রাসায়নিকসমূহ(Toxic Organic Chemicals) জৈব-
ক্লোরোযৌগ এক ধরনের কীটনাশক, সাংঘাতিক বিষাক্ত পদার্থ এদেরEcopoison বলা হয়।
শহরাঞ্জলধৌত বর্জ্য পদার্থ(Run-off from Urban Areas) : বৃষ্টির জলে নগর
ধৌত হয়ে তেল, গ্রিজ, ডিটারজেন্ট, নিউট্রিয়েন্টস, ভারী ধাতু ইত্যাদি ভৌমজলের সঙ্গে
এসে মিশে ভৌমজলকে দূষিত করে ।
দ্রবণীয় পদার্থের প্রবাহ(Soluble Effluents) :
কিছু দ্রবীভূত পদার্থ আছে যারা ভৌমজলকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে । মরু অঞল ও আর্দ্র অঞ্চলের মাটিতে দেখতে পাওয়া যায় । Sewage Sickness ভৌমজল দূষিত হয় শহর ও গ্রামের আবর্জনা, বর্জ জল পরিশোধন প্ল্যান্ট ওসেপটিক ট্যাঙ্ক ইত্যাদি থেকে । মাটিতে রোগসংক্রামক প্রতিনিধির সমাহরণ(Concentration of Infecting Agel Soil) মাটিতে বসবাসকারী জীবিত কোষ বা অণুজীব(Organism)-গুলি হল—ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, কেঁচো ইত্যাদি ।
এদের কোনোটি ক্ষতিকারক আবার কোনোটি ক্ষতিকারক নয় । যেমন—প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া খুবই ক্ষতিকারক । পেটের রোগে সংক্রামিত মানুষের মাটিতে এনটেরিক(Enteric) ব্যাকটেরিয়া, কৃমি(Parasitic Worm) ইত্যাদিরপ্যায়ে উৎপত্তি হয় । এই সকল প্যাথোজেনের লার্ভা, ডিম মাটিকে দূষিত করে । এইরকম মাটিতে যখন শাক- সজি, শস্য চাষ করা হয় তখন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ফল, শাকসবজি ও শস্যের আগ মানবদেহে প্রবেশ করে । মানুষের শরীরে প্যারাসাইটের আবির্ভাব হয় মানুষের দেহনিঃসৃত বর্জ্য মেশার জন্য । Bacillus Anthracis নামক প্যারাসাইটগুলি অনেক বছর ধরে মাটিতে বেঁচে থাকে। যা মানুষের দেহে অ্যানথ্রাক্স(Anthrax) বা বিষফোড়ার সৃষ্টি কর।
মৃত্তিকা দূষণের কারণ -
মৃত্তিকাদূষণের সজীব উপাদান হল ব্যাকটেরিয়া,প্রোটোজোয়া, কৃমি ইত্যাদি।জীবাণু দ্বারা মাটির দূষণ বিভিন্ন উপায়ে হয়ে থাকে।যেমন- শহরাঞলে গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে উৎপন্ন বর্জ্য, সিউয়েজ বা ফ্লাজ রূপে উৎপন্ন হওয়ার পরে তার সঠিক ট্রিটমেন্ট নাহলে তার জীবাণু মাটিকে দূষিত করে।পৌর প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা, প্রাণীদের মলমূত্র, হাসপাতালের পরিত্যক্ত বর্জ্যের জীবাণু মাটিদূষণ ঘটায়। অনেক রোগেরজীবাণু মাটিতেই বসবাস করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এদের ইউডেফিক কমপোনেন্ট বলে বা ইউডেফিক প্যাথোজেন বলে। যেমন—অ্যানথ্রাক্সের জীবাণুব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস।
2. রাসায়নিক পদার্থ :
বিভিন্ন ক্ষতিকররাসায়নিক উপাদান বিভিন্ন উপায়ে মাটিকে দূষিত করে। যেমন—10 মাটিতে যদি নিয়ম না মেনে অজৈব সার, যেমন—নাইট্রেট, সালফেট ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়, তা হলে এই উপাদানগুলি মাটিতে মিশে দূষণ ঘটায়। অনেকসময়ে সারে কৃত্রিম রাসায়নিক থাকে যা মাটিতে মিশে মাটিদূষণ ঘটায়। কীটনাশকের বিভিন্ন উপাদান ফসল বিনষ্টকারী বিভিন্ন জীব বিনাশ করলেও সেগুলি বিপজ্জনকভাবে দূষণ ঘটায়। যেমন—DDT,BHC প্রভৃতি।সোডিয়াম আরসেনাইট নামক আগাছানাশক, এনড্রিন-জাতীয় রোডেনটিসাইড (মেঠো ইঁদুর বা রোডেন্টিসাইট বিনাশকারী উপাদান) মাটিদূষণ ঘটায়।
মাটিদূষণের ফলাফল–
১। মানুষের ওপর প্রভাব :
মাটিদূষকগুলি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী তাদের প্রভাব বিভিন্ন রকমের হয়। মানুষের ওপর মাটিদূষকগুলির প্রভাব হল— দূষক উপাদানগুলি, সরাসরি মাটি স্পর্শ করার মাধ্যমে অথবা জীবাণু দ্বারা বাহিত হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে নানারকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে। অনেকসময়ে প্রশ্বাসবায়ুর দ্বারাজীবাণু সংক্রমণ ঘটে। যেমন—টিটেনাস রোগ সৃষ্টি করেক্লসট্রিডিয়াম টিটানি, গ্যাস-গ্যাংগ্রিন রোগ সৃষ্টি করে ক্লসট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেস, অ্যাসপারজিলেসিস রোগ সৃষ্টি করে অ্যাসপারজিলাস প্রভৃতি ইউডেফিক জীবাণ। অ্যাসপারজিলাস-এর সংস্পর্শে কর্ণকুহর, শ্বাসনালী প্রভৃতি স্থানে সংক্রমণ ঘটে। মাটিজাত রোগে অনেক সময় কৃমিঘটিত হয়। যেমন—অ্যাসকারিয়েসিস নামক রোগটি সৃষ্টি ক্লসট্টিডিয়াম টিটানি করে, অ্যাসকারিস লুম্ভিকয়ডিস্নামক কৃমি, স্ট্রংগাইলয়ডিয়েসিস রোগ সৃষ্টি করেস্ট্রংগাইলয়ডিসনামক কৃমি, ইকাইনোকক্কোসিস রোগ সৃষ্টি করেইকাইনোকক্কাসনামক কৃমি।
২। মাটির উপর প্রভাব (Effect) :
তরল বর্জ্যদূষণের ফলে মাটিতে অবস্থিত কার্বন ও নাইট্রোজেনের আলাপ পরিবর্তন ঘটে, লবণ অপসারিত বা পুঞ্জীভূত হয়, অম্ল ও ক্ষারীয় মান(pH) পরিবর্তিত হয়ে রাদি বিক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটে । ফলে মাটিতে জল ও বাতাসের গতিবিধির পরিবর্তন ঘটে এবং মাটির জন্য উর্বরতা হ্রাসপ্রাপ্ত হয় ।
কঠিন বর্জ্য(Solid Waste) এইসকলপদার্থমাটিরস্বাভাবিক ক্রিয়াকর্ম রোধ করে ওফলে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে, ইহা মনুষ্য সমাজ ও দেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক ।ভারী ধাতব উপাদানগুলি দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে অবস্থান করলে মাটির জৈব উপাদানগুলি বিনষ্ট হয় ।কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য জলের মধ্যে দ্রবীভূত লবণ উপস্থিত থাকে যা দীর্ঘদিন ধরে মাটিতে আল মাটি লবণাক্ত হয়ে পড়ে ।লবণাক্ত হয়ে শস্যহানি ঘটে । রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা[Food & Agriculture Organisation (FAO)]-র হিসাবে পৃথিবীর সেচযোগ্য কৃষিজমির ৬0% দ্রাব্য লবণের জন্য নষ্ট হয় ।
Also read :WATER POLLUTION
৩.জীববিবর্ধন:
খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর নীচ থেকে ক্রমশ উচ্চতর পুষ্টিস্তরে কোনোদূষকের ক্রমবর্ধমান সঞ্চয়ের ঘটনাকে জীববিবর্ধন (biomagnifications) বলে । জীববিবর্ধনের কারণ—খাদ্যশৃঙ্খলে দূষকের প্রবাহ:খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিটি পুষ্টিস্তরে দূষকের ঘনত্ব ক্রমপর্যায়ে বাড়তে থাকে ধরা যাক, উৎপাদক ফসলে কোনাে দূষকের মাত্রা X একক । একটি ফড়িং যদি পাঁচটি শস্য উদ্ভিদ গ্রহণ করে তবে তার দেহে দৃষকের মাত্রা হবে 5X,একটি ব্যাং যদি চারটি ফড়িং খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তবে তার দেহের দূষকের মাত্রা হবে 20X (4x 5X), সাপ যদি তিনটি ব্যাং খাদ্যরূপে গ্রহণ করে তবে সাপের দেহে দূষকের মাত্রা হবে 60X (3 x20K) অর্থাৎ, তিনটি পুষ্টি পর্যায়ে দূষকের ঘনত্ব 60 গুণ বেড়ে গেল ।
মৃত্তিকাদূষণ নিয়ন্ত্রণ(Controlling otSoil Pollution)
নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বনে মৃত্তিকা দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
মৃত্তিকাদূষণ নিয়ন্ত্রণেরউপায় সমূহ
মৃত্তিকাদূষণের বিভিন্নক্ষতিকারক প্রভাবথেকে পরিবেশকেরক্ষা করতেহলে মৃত্তিকাদূষণ নিয়ন্ত্রণকরা একান্তপ্রয়োজন বিভিন্নউপায়ে মৃত্তিকাদূষণ নিয়ন্ত্রণকরা সম্ভব–
শিল্পক্ষেত্রেবর্জ্য শোধন-
শিল্পক্ষেত্রেথেকে যে বর্জ্যপদার্থ সীসা, দস্তা,পারদ প্রভৃতি নির্গতহয় দেখতেহবে তা এখনযেন সরাসরিমাটিতে না মেসে। শোধনকরে নিয়েবাকি বর্জ্যমাটিতে ফেলতেহবে গুণগতমান নষ্টহবে না ।
কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিকসারের ব্যবহারকমানো-
কৃষি ক্ষেত্রেযখন উৎপাদনবাড়ানোর জন্যরাসায়নিক সারব্যবহার করাহয় তখনমাটি দূষিতহয়ে পড়ে। রাসায়নিকসারের ব্যবহারকমাতে হবে,জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতেহবে । এছাড়াকীটনাশক স্প্রেথেকে করাএকেবারেই চলবেনা জৈব পেস্টিসাইটব্যবহার করতেহবে।
প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থব্যবহার কমানো -
প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থমাটিতে মিশেমাটিকে দূষিতকরে তোলে। এই প্লাস্টিক বহুদিনধরে মাটিতেমেশে না । প্লাস্টিক মাটির গুণগতমান নষ্টকরে তাইমানুষকে সচেতনহতে হবে।প্লাস্টিক জাতীয়পদার্থ ব্যবহারকমাতে হবে,পুড়িয়েফেলতে হবে ।
হাসপাতালেরবর্জ্য পদার্থেরযথাস্থানে নিক্ষেপ-
হাসপাতালথেকে যে সমস্তবর্জ্য পদার্থযেমন সিরিজ,ছ্ওচ্ ,তুলা ব্যান্ডেজ্ ,ওষুধপত্র , ওষুধের খাপ , প্লাস্টিক জাতীয়পদার্থ সেগুলিযাদের নিক্ষেপনা করে যথাস্থানেপুড়িয়ে ফেলাহয় তাহলেমাটি দূষিতহবে না ।
সঠিকপ্রক্রিয়া করণসমস্ত বর্জ্যপদার্থ গুলিসঠিকভাবে প্রক্রিয়াকরণকরতে হবেএবং মাটিদূষিত হওয়াথেকে রক্ষাকরতে হবে। এছাড়া-
(১) Using Sanitary Landfills অর্থাৎ অপরিশোধিত বর্জ্য মাটির তলায় কবর দিয়ে মাটি চাপা
(২) Forestation অর্থাৎ মরুভূমি ও খরাপ্রবণ অঞলের বৃদ্ধি রোধ করতে বনসৃজন করা ।
(৩) কঠিন বর্জ্য; যথা-আবর্জনা, ছাই, গাদ(Sludge), বাড়িঘরের ভগ্নাংশ, খালি বোতল মাটিতে নিক্ষেপ করা ।
(৪) বিষাক্ত রাসায়নিক জৈব ও অজৈব পদার্থ; যথা—অ্যালড্রিন, ডায়ালড্রিন, আর্সেনিকইত্যাদি বিশেষ অবস্থায় কেবল মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে ।
(৫) শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য জল মাটিতে নিক্ষেপ করার আগে ভালোভাবে পরিশোধন করা ।
(৬) সর্বোপরি আইন প্রনয়ন করতেহবে ,মানব সমাজকে সচেতন হতে হবে ।
গ্রন্থপঞ্জী –
(১) দাস দুলাল “ভূগোল ও পরিবেশ” কলকাতা-৭০০০৭৩, প্রথম প্রকাশ ২০১৬।
(২) ঠাকুর চক্রবর্তী ,ডক্টর মহাদেব “সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণ পদ্ধতি ভূগোল” রীতা পাবলিকেশন , কলকাতা -০৯।
(৩) হাজরা ডক্টর যুধিষ্ঠির “আধুনিক ভূগোল” বুক ইন্ডিয়া ,একাডেমী পাবলিশার্, কলকাতা -৭০০০৬৫।
(৪) “জীবনবিজ্ঞান ও পরিবেশ” শুভ্রনীল চক্রবর্তী ,দশম শ্রেণি ।
(৫) উচ্চ মাধ্যমিক “পরিবেশ বিদ্যা” ডক্টর অলকা দেবী ,ভগবতী পাবলিকেশন ।
(৬) “পরিবেশ” ডক্টর অনিশচট্টোপাধ্যায় টিডি পাবলিকেশন।
(৭) google scerch….
(৮) ছবি ঃPIXABAY
Also read :WATER POLLUTION
[…] বিজ্ঞানের ও সভ্যতার অগ্রগতির জন্য বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন , ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ইত্যাদি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে । এই সমস্ত গ্যাস বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে দিয়ে সূর্য রশ্মি অতি সহজে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু দীর্ঘ তরঙ্গ বা অবহেলিত বিকিরণকে এই সমস্ত গ্যাস শোষণ করে বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে, একেই গ্রীন হাউস প্রভাব বলে। এইভাবে পৃথিবী নিজেই একটি গ্রিন হাউস এ পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে একে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলা হয়। Also read – soil pollution […]
ReplyDelete