বায়ু দূষণের কারন ও প্রতিকার (air pollution)
বায়ু দূষণের কারন ও প্রতিকার (air pollution)
বায়ু দূষণের কারন ও প্রতিকার (causes and solution of air pollution) :-
পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে বায়ুমণ্ডল যা প্রায় 150 কিলোমিটার বিস্তৃত গ্যাসীয় আবরণ, বায়ুমন্ডল গ্যাসীয় উপাদান ধূলিকণা মেঘ ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত।আমরা জানব বায়ু দূষণের কারন ও প্রতিকার ( causes,solution and effect of air pollution) ।বায়ুমণ্ড়লের মূল উপাদান গুলির পরিমান হল নাইটোজেন -78.09%, অক্সিজেন -20.95, কার্বন ডাই অক্সাইড -0.03% ও নিষ্ক্রিয় গ্যাস -0.93% থাকে।এছারা অন্যান্ন গ্যাস খুব সামান্য থাকে। অবশিষ্ট খুব সামান্য পরিমাণে হাইড্রোজেন,কার্বণ মনো অক্সাইড,ওজোন, নিয়ন,হিলিয়াম,মিথেন,জলীয় বাষ্প দেখা যায়। বিভিন্ন উচ্চতায় গ্যাসীয় উপাদানগুলির পরিমানেরর পরিবর্তন দেখা যায়।বায়ু পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ,বায়ু ছাড়া মানুষ,প্রাণী ও উদ্ভিদ তথা জীবের অস্তিত্ব টিকে থাকা সম্ভব নয় । বায়ু দূষণ এক দুরন্ত দস্যুর মত অবিরাম আক্রমণ করেছে আমাদের এই সুন্দর প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।আমাদের জীবনের সুস্থতা আর সজীবতা সঞ্চার করেছে।আমাদের সমাজ ও সভ্যতার বুকে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই আজ এই বায়ু দূষণের কবলে।বিজ্ঞানের আশীর্বাদে তৈরি কলকারখানার এবং যানবাহন থেকে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত ধোঁয়া ও নির্বিচারে সবুজের ধ্বংস করার ফলে বাতাস তার বিশুদ্ধতাকে হারিয়েছে।
বায়ুমণ্ড়লের মূল উপাদান গুলির পরিমান হল-
সংঙ্ঘা(Definition of air pollution ):-
প্রধান বায়ুদূষক উপাদান গুলি হল–
বায়ু দূষণের কারণ ( causes of air pollution) –
প্রাকৃতিক কারণ
কৃত্রিম কারণ –
জীবজগতেরউপর বায়ু দূষণ কারী সকল পদার্থ গুলির ক্ষতিকারক প্রভাবঃ-
11.অ্যাসিড বৃষ্টি হয়(Acid Rain) :-
12.আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর প্রভাব (Impact on weather and climate change) :
বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন প্রকারের গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছেএকদিকে ওজোন তরে গহর সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তন(climate change) ঘটেছে।এর ফলে শহরে ও শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা এবং অম্লবৃষ্টির সৃষ্টি হচ্ছে।
বায়ু দূষক পদার্থ কীভাবে স্বাস্থ্যহানি ঘটায় তা নীচের ছকে দেখানাে হল ।
বায়ু দূষক পদার্থ ক্ষতিকারক পদার্থ | কীভাবে স্বাস্থ্যহানি ঘটায় |
1. কার্বন মনােক্সাইড গ্যাস | হিমােগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে মাথাধরা, বমি-বমি ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।। |
2. সালফার ডাইঅক্সাইড | চোখ জ্বালা, শ্বাসনালির প্রদাহ, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসার ইত্যাদি। |
3. নাইট্রোজেন অক্সাইড | ব্রংকাইটিস, নিউমােনিয়া, ফুসফুসের প্রদাহ ইত্যাদি। |
4. হাইড্রোজেন সালফাইড | মাথাধরা, বমি-বমি ভাব, চোখ জ্বালা, ক্ষুধামান্দ্য, উদরাময়, নিউমােনিয়া ইত্যাদি |
5. হাইড্রোজেন সায়ানাইড | মাথাধরা, দৃষ্টি কমে যাওয়া, স্নায়ুকোশের মৃত্যু ইত্যাদি। |
6. অ্যামােনিয়া গ্যাস | চোখ জ্বালা, শ্বাসনালির প্রদাহ। |
7. ক্লোরিন | সম্পূর্ণ শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়। |
ৰায়দষণের উৎস ও সমস্যা (Sources of Air pollution and Problems) :
পৃথিবীর
উন্নয়ন এর সঙ্গে বায়ুদূষণ সরাসরিভাবে সম্পর্কযুক্ত। এইসমস্ত দেশে বায়দষণ প্রধানত ঘটছে নগরায়ণ, শিল্পায়ণ, জনসংখ্যা ও পরিবহণের ব্যাপক ন্য। শহর ও শহরতলি এলাকায় এইসমস্ত কার্যকলাপ বেশিমাত্রায় ঘটে, ফলে বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে ভারতসহ বহু দেশে মেট্রোসিটি (Metro city) নির্মাণের যে প্রচেষ্টা শর হয়েছে তার ফলে যানবাহনের সংখ্যা, বিমান চলাচল এবং কংক্রিটের ইমারত নিমাণ ক্রমবর্ধমান। জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধি এবং তার সঙ্গে পাবলিক টান্সপাের্ট ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার বায়ুদূষণের সমস্যাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বায়দষণের প্রভাবে সমস্ত বয়সের মানুষের ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা থেকে শুধু নয় । সমস্যা, ফসফসের ক্যানসার, রেসপিরেটরি ইনফেকশনের মতাে অসুখ দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে WHO (World Health Orgamat সাম্প্রতিক
একটি
রিপাের্টে প্রকাশ করেছে, পৃথিবীতে মােট মৃত্যর মধ্যে প্রতি আটজনের একজনের মৃত্যুর কারণ হল বায়ুদূষণ।
মানব
শরীরে
বায়ুদূষণের প্রভাব (Effects of Air pollution on Human health) :
মানব পরিবেশের
ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর
প্রভাব : (Effects on human health:)
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুযায়ী, মানুষ
গড়ে প্রতিদিন
22.000 বার প্রশ্বাস
নেয় এবং প্রায় 16 কেজি
বায়ুগ্রহণ করে। বস্তুতপক্ষে
এটি খাদ্য ও পানীয় অপেক্ষা বেশি। পরীক্ষায়
দেখা গেছে, একজন মানুষ পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত খাদ্যগ্রহণ
না করে বেঁচে থাকতে পারে, পাঁচ দিন জল পান না করে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু ছাড়া পাঁচ মিনিটও বাঁচতে পারে না। ফলে বায়ু দূষণ ঘটলে তা মানব স্বাস্থ্যের
পক্ষে কতখানি ক্ষতিকারক অনুমান
করা যায়। বায়ুদূষণের
ফলে শ্বাসকষ্ট,
নিউমােনিয়া, ব্রংকাইটিস,
ফুসফুসের রোগ,
চোখ-মুখ ও গলার রোগ, পেটের রোগ, দাঁতের মাড়ির রোগ, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত,ক্যানসার, অ্যাসবেস্টোসিস,
সিলিকোসিস, নিউমোকোনিওসিস,
এমফাইসেমা প্রভৃতি
রোগ ফুসফুসের
ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব ঘটে। কোনো শিল্পকারখানা
থেকে হঠাৎ করে বিষাক্ত গ্যাস প্রচুর পরিমাণে বের হলে অন্ধত্ব থেকে শুরু করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। 1984-তে ভূপাল শহরে ইউনিয়ন কারবাইডের কীটনাশক
তৈরির কারখানা থেকে মিথাইল আইসােসায়ানেট (MIC) ট্যাংকের ফুটো
দিয়ে বের হয়ে যায় এবং 2500 জন
মানুষের প্রাণহানি
ঘটায়। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম বায়ু দূষণজনিত দুর্ঘটনা।
বায়ু দূষণ থেকে পেশাগত রোগ(occuptional disease from air pollution):
মানুষের
শরীরে
বায়ুদূষণের প্রভাব মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী সাধারণত সাময়িকভাবে
চোখ-নাক-মুখ জ্বালা এবং শ্বাসকার্যের
সমস্যা
। বায়ুদূষণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ব্রঙ্কাইটিস, হার্টের রােগ, লাং ক্যানসার, হাঁপানি প্রতলিত , বায়দষণের প্রভাব বাচ্চাদের
পক্ষে
আরও
মারাত্মক হয়। বাচ্চারা বাইরের পরিবেশে খেলাধুলা ন পিরবেশে খেলাধূলা করে ফলে, এই সময় এদের শ্বাসকাযের হার বেড়ে যায় এবং দূষিত বাতাস বেশি পরিমাণে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ধাতব কণার পরিমাণ খুব বেশি থাকে। বাজি পােড়ানাের পরে সিসা, স্ট্রনশিয়াম, পটাশিয়াম ও পটকাবাজির সঙ্গে বের হওয়া ধোঁয়ায় ধাতব কণার পরিমাণ খুব বেশি থাকে এর প্রভাবে ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। COPD রােগের সম্ভাবনা বাড়ে, ও ম্যাগনেশিয়ামের
মাত্রা
প্রচুর
পরিমাণে
বেড়ে যায়।
প্রধান কয়েকটি বায়ুদূষণ প্রতিষেধক যন্ত্র যেভাবে ব্যবহার করা হয় ।
1) ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর (Electrostatic Precipitator ) : এটির সাহায্যে বায়ু থেকে ধুলাে, ধোঁয়া ইত্যাদি অপসারণ করা হয়।
এর মধ্যে দূষকপূর্ণ বায়ু প্রবেশ করিয়ে দূষক পদার্থগুলিকে থিতিয়ে জমা করা হয় এবং বিশুদ্ধ বায়ু নির্গত করা হয়।
2) ক্যাটালাইটিক কনভার্টার (Catalytic Converter) ঃ এগুলি বিভিন্ন গাড়ির ইঞ্জিনের সঙ্গে লাগানাে হয়। এর সাহায্যে গাড়ির ধোঁয়া থেকে
দূষক পদার্থগুলিকে আলাদা করে অন্যান্য পদার্থে পরিণত করা হয়। যেমন—কার্বন মনােক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ইত্যাদিকে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডে রূপান্তরিত করা হয়।
3) স্ক্রাবার (Scrubber) : এই যন্ত্রের সাহায্যে বায়ু থেকে অ্যামােনিয়া, সালফার ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসকে পৃথক করা হয়।
4) সাইক্লোন সেপারেটর (Cyclone separator) : এই যন্ত্রের সাহায্যে দূষিত বায়ু থেকে ঘূর্ণনের সাহায্যে কণাজাতীয় দূষক পদার্থগুলিকে অপসারণ করা যায়।
বায়ু দূষণের কারণ .
সমস্যার সমাধান নির্ণয় (Policy formation to solve the air pollution) :
- বায়দুষণ সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা।
- বক্ষরোপণের মাধ্যমে বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। |
- গাড়ি চালানোর সময় জীবাশ্ম জ্বালানি কম পোড়ানো এবং বেশি মাইলেজের গাড়ি ব্যবহার করার মাধ্যমে বায়দষণ কমানোসম্ভব।
- এ ছাড়া, বন্ধ ঘরে মোমবাতি বা মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বালানো বন্ধ করতে হবে।
- বাবা-মাকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিশুরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড়ো না হয়। কারণ, আবর্জনাপূর্ণ পরিবেশ থেকে বেশিরভাগ বায়ুঘটিত রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়।
- শহরাঞল থেকে দূরে কলকারখানা স্থাপন ।
- হাঁটা, সাইকেলের ব্যবহার প্রভৃতি দ্বারা বায়ুদূষণ রোধ হয়।
- বাড়িতে কয়লার উনুন ব্যবহার বন্ধ করা।
- বসতি এলাকা থেকে দূরে শিল্পাঞল গড়ে তোলা উচিত। বিভিন্ন কলকারখানা, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যাতে ভস্ম, ধূলিকণা মিশ্রিত ধোঁয়া বাতাসে মিশতে না পারে তার জন্য নিগর্মন চিমনিতে অত্যাধুনিক ফিল্টার লাগানাো উচিৎ।
- গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বন্ধ করা ও গণপরিবহণ ব্যবস্থা (Car Pool System) দ্বারা বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো যায়।
- বাড়িতে ইলেকট্রিক হিটার, সৌরচুল্লি, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনর প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
- বেশি জনঘনত্বযুক্ত এলাকা বা শিশুদের কাছ থেকে দূরে গিয়ে খোলামেলা জায়গায় বাজি, পটকা পোড়ানো উচিৎ। এর দ্বারা সিসার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে।।
Also read: জল দূষণের কারন কী?
1.মন্ডল ডঃ চৈতন্য "সমাজবিজ্ঞন শিক্ষন পদ্ধতির রূপরেখা "রীতা পাবলিকেশন।
2.পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষক পর্ষদ "আমাদের পৃথিবী" সপ্তম শ্রেণী।
3."জীবনবিজ্ঞ।ন ও পরিবেশ "শুভ্রনীল চক্রবর্তী।দশম শ্রেণী।
4.হাজরা ,ডঃ যুধিষ্টীর ,দাস অধ্যাপক দুলাল,"আধুনিক ভূগোল" বুক ইণ্ডিয়া।
[…] কলকারখানা ও যানবাহনের মাধ্যমে বাতাসে সালফার–ডাই–অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ইত্যাদি জমা হয় ও পরে তা অম্ল বৃষ্টি হয়ে মাটিতে তথা জলাশয় মেশে ও জল দূষিত করে। Also Read : বায়ু দূষণের কারন(Causes of Air Pollution) […]
ReplyDelete[…] ALSO READ : বায়ু দূষণের কারন ও ফলাফল। […]
ReplyDelete[…] read: জল দূষণের কারন কী? বায়ু দূষণের কারন ও ফলাফল। (adsbygoogle = window.adsbygoogle || […]
ReplyDeleteAwesome web thanx
ReplyDelete[…] 1.5 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পেয়েছে।বায়ু দূষণ ঘটছে প্রতিনিয়ত । বিশেষভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের […]
ReplyDeleteArpan
ReplyDeleteArpan mondal
ReplyDelete