বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা রচনা (Essay on plantation requirements)
বৃক্ষরােপণের প্রয়োজনীতা
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী: পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি জরুরি পদক্ষেপ। বর্তমান যুগে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশদূষণের সমস্যাগুলি দিনের পর দিন বাড়ছে, সেখানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমরা যে ভূমিকা রাখতে পারি তা অপরিসীম।মানব জীবনে বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা ( plantation requirements) সংরক্ষণের উদ্যোগ ,গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান ,ইতিহাসে বৃক্ষরােপণ ও বনমহােৎসব, বৃক্ষরোপন কর্মসূচী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ।
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব
প্রথমেই আসা যাক বৃক্ষরোপণের গুরুত্বের দিকে। গাছপালা পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে, যা গ্রীনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমায়। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার একটি কার্যকর উপায়।
এছাড়া, বৃক্ষরোপণ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল রক্ষা হয়, যা একসাথে একটি সুস্থ বাস্তুসংস্থান গড়ে তোলে।
অন্ধ ভূমি গর্ভ থেকে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বানপ্রাণের প্রথম জাগরণে তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ ।
ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলােকের প্রথম বন্দনা
ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ পরে...।
সাড়ে চারশাে কোটি বছর আগে তরুণী ধরিত্রীর বুকে যেদিন প্রথম সূর্যের কিরণ স্পর্শ ঘটেছিল, সেদিন নিদ্রিতা রাজকন্যার ঘুম হয়তাে ভেঙেছিল, কিন্তু তখনও প্রাণের সম্ভাবনা ছিল দূর অস্ত’। অস্থির এক গ্যাসীয় আবরণ বিরাজিত ছিল সেদিন পৃথিবীতে। তারপর এক কোটি এ বছর ধরে চলেছে মৃত্যুর সঙ্গে জীবনের লড়াই। অবশেষে বাসযােগ্য জলবায়ু ভূমিকা সৃষ্ট হবার পর প্রাণের প্রথম বিজয়ী রূপ দেখা গেল সবুজ কণিকা ক্লোরােফিল বা উদ্ভিদের মধ্য দিয়ে।
বনমহােৎসব ঃ
ক্রমবিবর্তনের অনেকগুলি পদক্ষেপ অতিক্রম করে ধরিত্রীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তানরূপে আবির্ভূত হল মানুষ। অরণ্যভূমি মাতৃস্নেহে লালন করেছে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মানুষকে। তরুরাজির কাণ্ডে, ফুলে, পত্রে, ফলে, অস্থিতে মূর্ত হয়ে উঠেছিল মানুষের কল্যাণে আত্মত্যাগের এক মহান প্রেরণা ।বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পৌঁছে সকলের অন্তরেই বৃক্ষলতার শ্যামলিমার জন্য এই আকাঙ্ক্ষা মুখর হয়ে উঠেছে। যন্ত্র-সভ্যতার আশীর্বাদের সঙ্গে সঙ্গে তার অভিশাপও মানুষকে বহন করতে হচ্ছে। ঈশ্বর যে অরণ্য-পর্বত-সমুদ্র ঘেরা পৃথিবী মানুষের জন্য রচনা করেছিলেন ব্যবহারিক প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষ প্রতিদিন তা নতুন করে গড়ে তুলেছে। এটা একদিকে যেমন মানব-মনীষার জয় ঘােষণা করে, অন্যদিকে তেমনি সমূহ সর্বনাশেরও সূচনা করেছে। বৃক্ষলতাহীন যান্ত্রিক জীবন অস্বাস্থ্য ও নানাপ্রকার ব্যাধির প্রকোপে ব্যতিব্যস্ত। তাই বিশ্বজুড়ে আজ বনমহােৎসব বা বৃক্ষরােপণের প্রয়ােজনীতা অনুভূত হচ্ছে।ইতিহাসে বৃক্ষরােপণ ও বনমহােৎসব :
যে আগুন, শমিগাছের ঘর্ষণে মানুষ আবিষ্কার করেছিল সেই আগুন। ফল মাটিতে পড়ে, জল পেয়ে বীজ থেকে আবার গাছ হয়, মানুষের নজরে এসেছিল। এ শিক্ষা গাছের থেকে। চাষ থেকে মাথার ওপরে গাছের পাতার বাস’ (হােম’ Home) কিংবা গাছের ছাল (বষ্কল) পরা সে সবই তাে বনের দান। তারপর মানুষের যে ‘বেদ’ অর্থাৎ বিদ্যা সেটাও এসেছে। তপােবন নামে সাজানাে বনে। সভ্যতার শুরু শুধু নয়, সভ্যতার বিকাশও হয়েছে বনের হাত ধরে।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতাসৃষ্টির উষালগ্নে মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল ভারতবর্ষের অরণ্যভূমিতে। আমাদের দেশের মুনি-ঋষিরা জানতেন অরণ্যের সাথে আমাদের সম্বন্ধ কী নিবিড় আত্মীয়তার। মানুষের ক্ষুধার অন্ন সে জুগিয়েছে। লজ্জা নিবারণের জন্য দিয়েছে বল্কল, বৃক্ষের পত্রে রচিত হয়েছে। শাস্ত্রের বিধান, যজ্ঞকর্মে সমিধ হবার জন্য সে নিজেকে আহুতিরূপে দান ভারতবর্ষ ও এ করেছে, মানুষের অসুখে জুগিয়েছে ওষুধ, তার পুষ্পসম্ভার নিবেদিত হয়েছে। বনভূমি দেবতার পায়ে, তার দেওয়া অক্সিজেন আবহাওয়াকে করেছে নির্মল, মানুষের পরিত্যক্ত ক্ষতিকারক কার্বন ডাইঅক্সাইডকে সে নিজ শরীরে ধারণ করেছে। প্রাচীন ভারতের বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থে, জীবনে বৃক্ষের অপরিসীম গুরুত্বকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করা হয়েছে। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয়। সে বিষয় সম্পর্কে ভাবিত হয়েছে ভারতবর্ষ, যা অত্যাধুনিককালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চিন্তার বিষয়রূপে বিশেষ স্বীকৃতিলাভ করেছে ।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা
মহাভারতে বৃক্ষরোপণ
পৃথিবীর বায়ু-জল দূষিত না করার কথা, অকারণে বন ধ্বংস না করার কথা ধর্মশাস্ত্রসমূহ, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থে বারবার উল্লেখিত হয়েছে। মহাভারতকার বলেছেন, বৃক্ষরােপণ করলে অক্ষয় পুণ্য লাভ হয়, ইহলোেক পরলােকে অক্ষয় কীর্তি লাভ হয়। তাছাড়া মহাভারতে গাছকে সর্বদা পুত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পুত্র যেমন শ্রাদ্ধাদি দ্বারা পিতৃপুরুষের তর্পণ করে, গাছও তেমনই ফল ফুল ছায়া দিয়ে মৃত বৃক্ষরােপণকারীকে তর্পণ করে—ভারতীয়দের কাছে প্রাচীনকালে বৃক্ষের প্রতি মনােভঙ্গি ছিল এরকমই। ক্রমে পায়ে পায়ে দিন বদল হল, এল নতুন যুগ, এল নতুন সভ্যতা। গ্রাম্য জীবনের পরিবর্তে শহর জীবনের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে। শ্যামল স্নেহের সভ্যতার প্রসার ও অরণ্যভূমির বিনাশ সম্পর্ককে সজোরে ছিড়ে ফেলতে প্রয়াসী হল মানুষ। বেদ-উপনিষদের অধ্যাত্ম-রসপুষ্ট রবীন্দ্রমানস মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদানকে অসীম শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেছেন। বারবার বন্দনা করেছেন বৃক্ষকে। জটিল যান্ত্রিক যুগের অবসানকল্পে কত যে গান কবিতা নাটক রচনা করেছেন তার সীমা-সংখ্যা নির্ধারণ করা রবীন্দ্রনাথের বনমহােৎসব কঠিন। জটিলতা মুক্ত স্বাভাবিক জীবন ঈশ্বরের আশীর্বাদ।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতানাগরিক সভ্যতার বিষবাষ্পে রুদ্ধশ্বাস কবি বড়াে দুঃখে বলেছেন— “দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর।”
বৃক্ষরোপন কর্মসূচী -
১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম সরকারী উদ্যোগে বনমহােৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বৎসর সরকারী ব্যবস্থাপনায় দেশের সর্বত্র বৃক্ষরােপণ উৎসব পালন করা হচ্ছে। সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে ছায়াপ্রদ দীর্ঘজীবী বৃক্ষের চারা রােপণ করা হচ্ছে। জনসাধারণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এই উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে চারা গাছ বিতরণ করা হয়। তবে প্রয়ােজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। শহরের পৌর প্রতিষ্ঠানগুলি এবং বৃহৎ শিল্পসংস্থা এই বিষয়ে অগ্রসর হলে যথেষ্ট বৃক্ষরােপণ হতে পারবে। প্রতিটি শহরেই আজ শ্যামল সবুজ উন্মুক্ত প্রান্তরের অত্যন্ত অভাব। কিন্তু বিদেশে এমনটি হয় না। সেখানে নগর পরিকল্পনার সময়ে উদ্যান ও প্রান্তরের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়। সুতরাং মানুষকে বাঁচতে হলে তার আদিম জীবনের প্রতিবেশী তরুলতাকেও বাঁচাতে হবে।বন ধ্বংসের পথে :
মানুষের যা দরকারে লাগে তাই সে জোগাড় করতে চায়। মানুষের মাত্রাজ্ঞান অনেক সময় থাকে না। তাই দিন যতই যাচ্ছে বন ততই কমছে। তুলনায় সে পরিমাণে গাছ লাগানাে হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে বসেছে। বৃক্ষবিরল জীবনের অভিশাপ ও আধুনিক সভ্যতার বিজয়গৌরব বহন করে গড়ে উঠেছে। কল-কারখানা-অধ্যুষিত নগরসমূহ। পরিবহন কার্যে নিয়ােজিত রয়েছে অসংখ্য যন্ত্রচালিত যানবাহন। মানুষের বসতি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রতিদিন অগণিত বৃক্ষ-ছেদন করা হচ্ছে। এক একটি শহর হয়ে উঠেছে বৃক্ষলতার স্পর্শহীন পাষাণপুরী। কল-কারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আকাশ-বাতাস কলঙ্কিত। এরই পরিণামে সভ্যতাগর্বী মানুষের জীবন জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। - নগরজীবন বৃক্ষবিরল হয়ে আসায় মানুষের প্রাণের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তাই বিজ্ঞানীরা রব তুলেছেন, পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে তরুরাজির শ্যামল ছায়ায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে তাই বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা আছে। এক কলকাতা শহরেই নাকি বায়ুমণ্ডলে ১৩০০ মেট্রিক টন দূষিত কণা ভেসে বেড়াচ্ছে। এ থেকে শহরতলির শিল্পাঞ্চলের অবস্থা কল্পনা করা যায়।
গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান
অরণ্যভূমির উপকারী বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারের বিনিময়ে লাভ করল কৃতঘ্নতার চরম নিদর্শন। ঘাতকের কুঠারাঘাতে কত বনভূমি যে মরুভূমিতে পরিণত হল তার ইয়ত্তা নেই। নগরজীবনে উখিত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মানুষকে জটিল রােগের শিকার করে তুলছে । বৃক্ষ অনায়াসে এই বিষকে কণ্ঠে ধারণ করতে পারে, কিন্তু আমরা পারি না। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর অক্সিজেন প্রয়ােজন, যেটা বৃক্ষই দিতে পারে। বায়ুর দূষণরােধে পরিবেশের ভারসাম্য রচনার অরণ্যের অপ্রদায়িত্ব বহন করে বৃক্ষ। সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, তুলতায় রােগের ক্লোরাইড ইত্যাদি দূষণরােধে সক্ষম না হলে নগরজীবন দুরারােগ্য ব্যধিতে বিস্তার। ছেয়ে যাবে। অথবা পৃথিবীতে দেখা দেবে বিপুল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুমেরুর বরফ গলতে শুরু করবে। বৃক্ষহীনতায় বৃষ্টি কমবে, অতিরিক্ত সূর্যতাপে মাটি হয়ে উঠবে রুক্ষ। আফ্রিকার সুদান বা আমেরিকার আমাজান অববাহিকায় যে অসুরের পদধ্বনি ইতিমধ্যেই শুত হচ্ছে তা পৃথিবীর অন্যত্রও দেখা যাবে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এখনই।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা
মানব জীবনে বৃক্বষরোপনের প্রয়োজনীতা -
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ুর সমতা বজায় রাখা, জমির জয় রােধ, বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া—সবকিছুর জন্য চাই বন। বনকে অবহেলা করা মানে নিজের উন্নতিতে আঘাত হানা। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বনাঞ্চলের পরিমাণ ১১,৮৬,০০০ হেক্টর।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে প্রাকৃতিক পরিবেশে সাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই বৃক্ষরােপণ আধুনিক মানুষের জীবনে এক প্রাণপ্রদ উৎসব। | বৃক্ষ ও মানবজীবন ও বৃক্ষ মানবজীবনের মূল্যবান সম্পদ। হিসাব করে দেখা গেছে একটি বৃক্ষ যদি পঞ্চাশ বছর বাঁচে তবে তা থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার সমপরিমাণ প্রাণদ অক্সিজেন পাওয়া যেতে পারে। উদ্ভিদের অভাবে বৃষ্টিপাতেরও তারতম্য দেখা দেয়। বৃক্ষ বহুমূল্য বনজ সম্পদ। তাই একদিকে বৃক্ষ যখন ধ্বংস করা হচ্ছে অন্যদিকে তখন নতুন বৃক্ষের সৃষ্টি করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাম্য রক্ষার জন্য দেশের মােট ভূখণ্ডের অন্তত শতকরা দশ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার।
ভারতের বননীতি
ভারতের বননীতি হল, সমতলে তেত্রিশ ভাগ এবং পার্বত্য অঞ্চলে তেষট্টি ভাগ বনভূমি রাখতে হবে। | প্রাচীন ভারতে তপােবন সভ্যতা মানবজীবনে বৃক্ষলতার গুরুত্ব অনুভব করেছিল। মুনি ঋষিদের সাধনক্ষেত্র, বিদ্যাশ্রম প্রভৃতি প্রকৃতির উদার উন্মুক্ত পরিবেশের মাঝখানে স্থাপিত হত। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন একদা সেই আদর্শকেই বাস্তবে রূপায়িত করতে চেয়েছিল। সম্প্রতি ভারতেও বৃক্ষ-সম্পদের গুরুত্ব সম্বন্ধে সচেতনতা দেখা দিয়েছে।সংরক্ষণের উদ্যোগ :
দেরিতে হলেও এখন সরকার বুঝেছে এবং মানুষও নাচেতন হয়েছে বন সংরক্ষণের ব্যাপারে। বৃক্ষরােপণ, চারার সযত্ন পালন, সামাজিক বলাসৃজন, তাই এখন অগ্রাধিকার পেয়েছে। সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলাের এ. ধারনের উদ্যোগের সুফল লক্ষ করা গেছে। সুন্দরবন এলাকায় আলাদাভাবে ম্যানগ্রোভ মাত্রা লাগানাে হয়েছে। একাজে পঞ্চায়েতগুলােও বেশ সাফল্য দেখাচ্ছে। অভয়ারণ্য। নিশ্চিত করেছে পশু-পাখির জীবন। বনে বাঘ ও অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাও বাড়ছে। খাবারের জন্য জন্তুদের এখন লােকালয়ে আসার ঘটনা কমেছে। সুদূর সাইবেরিয়া, থেকে আসা পাখিরা এখানে সুখে বাসা বাঁধে।| তাই আর কোনােভাবেই বনভূমির ধ্বংস নয়, এবার বনভূমির সংরক্ষণে যত্ন নিতে হবে আমাদের। প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ-প্রদর্শিত পথে আমরাও বনসৃজনের বার্তা ছড়িয়ে দেব দিকে দিকে। বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা|বনসৃজনে উৎসাহ
বনসৃজনে উৎসাহ বাড়ানাের জন্য এবং অরণ্য ধ্বংসের গােপন আক্রমণ রােধ করার জন্য চাই সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। একদিকে গ্রামাঞ্চলে সমাজভিত্তিক অরণ্যসৃজনকে আরও উৎসাহিত করতে হবে, অন্যদিকে নগরাঞ্চলে উদ্যান-সৃষ্টির প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করতে ভশংস হবে। পরশুরামের মাতৃঘাতী কুঠারকে বর্জন করতে না পারলে ওই কুঠার একদিন আমাদের পদমূলেই আঘাত হানবে। তাই প্রবল প্রাণের কাছে নতজানু হয়ে বলি— মরু বিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে। হে প্রবল প্রাণ ধূলিরে ধন্য কর করুণার পুণ্যেহে কোমল প্রাণ।বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা
also read : AIR POLLUTION
পরিবেশ ও জীবনের উপর বৃক্ষের গুরুত্ব
বাঙালির রােজকার জীবনধারণে, সৌন্দর্য ও কলাচর্চায় বন ও বনজ আমাদের ভূমিকা অনেকটা। নানারকম ফুল, ফল, মধু; হাতির দাঁতের কাজ; শিং-এর ভিননি; সেগুন ও অন্যান্য কাঠের আসবাব; শালের খুঁটি; বাঁশের সামগ্রী; নৌকোর তালের ডােঙা থেকে কঞ্চির ছিপসবই জোগাচ্ছে বন। বনকে অবহেলা করায় আমাদের দুর্দশা এসেছিল। এখন বনকে গুরুত্ব দেওয়ায় বনও আমাদের দুহাত ভরিয়ে একজন কবি যথার্থই বলেছেন - “গ্রাম ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং শহর মানুষের রচনা।” দেখা গেছে যেখানেই মানুষ সৃষ্টির উপর হস্তক্ষেপ করেছে সেখানেই প্রকৃতি নিয়েছে। নির্মম প্রতিশােধ। সুতরাং জীবনকে সুন্দর ও সুস্থরূপে উপভােগ করতে হলে বৃক্ষের শ্যামল স্নিগ্ধ আশীর্বাদ ধারায় অবগাহন করতেই হবে। শুধু কাব্যিক বিলাস নয় নিতান্ত বাস্তব প্রয়ােজনেই বৃক্ষরােপণের প্রয়োজনীতা আছে ।উপসংহার :
রবীন্দ্রনাথ তার অনিন্দ্যসুন্দর ভাষায় বৃক্ষকে বন্দনা করে বলেছেন :‘শ্যামল সুন্দর সৌম্য, হে অরণ্যভূমি মানবের পুরাতন বাসগৃহ তুমি। নিশ্চল নির্জীব নহ সৌধের মতন তােমার মুখশ্রীখানি নিত্যই নূতন। বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীতা
মানুষকে তাই পরিবেশ সচেতন হতে হচ্ছে। একমাত্র অরণ্যই আমাদের পরিবেশ পরিসেবা করতে পারে। কলুষিত বিষাক্ত বাতাস নীলকণ্ঠের মত গ্রহণ করে অরণ্যানী নির্মল বাতাসে রূপান্তরিত করতে পারে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, রােধ করতে গাছের যথাযথ ভূমিকা আছে। বৃক্ষরােপণে বন বাঁচবে, বন্যপ্রাণী বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে। লােকালয় সুন্দর হবে, পৃথিবী হবে দূষণ মুক্ত । মনে রাখতে হবে পরিবেশ ও অরণ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। তাই অরণ্যের হানাবৃদ্ধির সঙ্গে পরিবেশের শুদ্ধতার ও হ্রাস-বৃদ্ধি স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে।
বৃক্ষরোপণ শুধু একটি পরিবেশগত প্রয়াস নয়, এটি আমাদের জীবনের একটি মৌলিক দায়িত্ব। এটি আমাদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। একসাথে আমরা যদি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীকে একটি আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করি, তবে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি এবং আমাদের চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর এবং জীবন্ত করে তুলি।পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করতে পারব।
SO READ : Amazon Rain Forest Fire
REFERENCE:রচনা শৈলী - রাখালরাজ মুখ্যপাধ্যায়।
PIC - Pixabay
Khub sundor kaku..
উত্তরমুছুনThank you 😀😀
Thank you..
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর।।
উত্তরমুছুন