বাড়িতে প্রাকৃতিক ঔষধি গাছ থেকে রোগ নিরাময়
বাড়িতে প্রাকৃতিক ঔষধি গাছ থেকে রোগ নিরাময়
ঔষধি গাছ, বাড়িতে ঔষধি গাছ, প্রাকৃতিক ঔষধ তৈরি, ঔষধি গাছ চাষের পদ্ধতি, ঘরোয়া ঔষধি গাছ, মেডিসিন ট্রি, ঔষধি গাছের ব্যবহার, হারবাল মেডিসিন, প্রাকৃতিক চিকিৎসা, ঔষধি গাছ থেকে রোগ নিরাময.
\আপনি কি কখনো এমন একটি দোকানে গেছেন যেখানে ঔষধের পাশাপাশি আপনি পেয়েছেন অকৃত্রিম যত্ন? হ্যাঁ, আমরা সবাই সেই ব্যস্ত ফার্মেসির অভিজ্ঞতা জানি যেখানে আপনি শুধু একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন আর ফিরে যান।কিন্তু এই ব্লগে আমরা মেডিসিন ট্রি'র অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলব,
ঔষধের চেয়েও বেশি কিছু। আমাদের ফার্মাসিস্টরা শুধু প্রেসক্রিপশন পূরণ করে না, তারা আপনার স্বাস্থ্য যাত্রার সঙ্গী। এখানে প্রতিটি পরামর্শ, প্রতিটি কথোপকথন আপনাকে সুস্থতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
তবে যা আমাদের সত্যিই আলাদা করে তা জানার জন্য আপনাকে আমাদের সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে হবে...
ঔষধি গাছের ইতিহাস ও ঐতিহ্য
প্রাচীন সভ্যতায় ঔষধি গাছের ব্যবহার
প্রাচীন মিশর থেকেই ঔষধি গাছের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ৫০০০ বছর আগে মিশরীয়রা পাপিরাস পাতায় ঔষধি গাছের তালিকা লিপিবদ্ধ করেছিল। "এবার্স পাপিরাস" নামে পরিচিত এই প্রাচীন গ্রন্থে ৭০০-এরও বেশি ঔষধি উদ্ভিদের ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় ৫০০০ বছর আগে ভারতবর্ষে জন্ম নিয়েছিল। "চরক সংহিতা" এবং "সুশ্রুত সংহিতা" গ্রন্থে তুলসী, আমলকী, হরীতকী, অশ্বগন্ধা সহ অসংখ্য গাছের ঔষধি গুণাগুণ লিপিবদ্ধ আছে।
প্রাচীন চীনে সম্রাট শেন নং (খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০) প্রথম ঔষধি গাছের গবেষণা করেন। তিনি "শেন নং বেন কাও জিং" নামে একটি বইতে ৩৬৫টি ঔষধের বিবরণ লিখেছিলেন।
গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস বলতেন, "তোমার খাবারই তোমার ঔষধ হোক, তোমার ঔষধই তোমার খাবার হোক।" রোমান সাম্রাজ্যে দিওস্কোরিডেস তার "ডি মাটেরিয়া মেডিকা" গ্রন্থে ৬০০-এর বেশি ঔষধি গাছের বর্ণনা দিয়েছেন।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঔষধি গাছের গুরুত্ব
আমাদের বাংলায় ঔষধি গাছ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবিরাজি চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিম, তুলসী, আদা, হলুদ, অর্জুন ছাল - এসব গাছের ব্যবহার আজও অব্যাহত আছে।
মায়া সভ্যতায় "পপল ভুহ" গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে তারা ২৫০-এরও বেশি ঔষধি গাছ ব্যবহার করত। আফ্রিকান উপজাতিরা বাওবাব গাছকে "জীবনের গাছ" বলে সম্মান করত কারণ এর প্রতিটি অংশ কোনো না কোনো রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে।
আমেরিকান রেড ইন্ডিয়ানরা একিনাসিয়া, গোল্ডেনসিল, সাসাফ্রাস গাছ দিয়ে অসংখ্য রোগের চিকিৎসা করত। এশিয়ার দেশগুলোতে জিনসেং, গিংকো বিলোবা, গ্রিন টি - এসব ঔষধি গাছ হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আয়ুর্বেদে ঔষধি গাছকে "দিব্য ঔষধ" বলা হয়। জাপানি "কামপো" এবং তিব্বতি "সোওয়া রিগপা" চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধি গাছের ব্যবহার শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে।
আধুনিক যুগে ঔষধি গাছের পুনরাবিষ্কার
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে ঔষধি গাছের গুণাগুণ নতুনভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছে। ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন। এরপর থেকে উদ্ভিদ জগৎ থেকে অসংখ্য ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বর্তমানে আমাদের বাজারে প্রায় ২৫% ঔষধ সরাসরি গাছ থেকে তৈরি। আরও ২৫% ঔষধের রাসায়নিক কাঠামো উদ্ভিদ থেকে অনুপ্রাণিত। ক্যান্সার, হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস - এসব মারাত্মক রোগের ঔষধও আমরা গাছ থেকে পাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের ৮০% মানুষ এখনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঔষধি গাছের উপর নির্ভরশীল। বিগত কয়েক দশকে হারিয়ে যাওয়া ঔষধি জ্ঞান পুনরুদ্ধারের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ও লোকজ জ্ঞান সংগ্রহে ব্যস্ত।
ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, জার্মানি সহ অনেক দেশেই আজকাল ঔষধি গাছ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। আমাদের দেশেও ঔষধি গাছের চাষ ও সংরক্ষণ নিয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে শক্তিশালী ঔষধি গাছের প্রজাতি
নিম: প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধক
নিম গাছটি আমাদের দেশে খুব পরিচিত। এই গাছের প্রতিটি অংশই ঔষধি গুণে ভরপুর। ছোটবেলায় আমরা অনেকেই নিমপাতা দিয়ে স্নান করেছি, যা ত্বকের নানা সমস্যা দূর করে। নিমের মধ্যে রয়েছে অ্যাজাডিরাকটিন নামক একটি উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাংগাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চর্মরোগ থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে নিমপাতার চা চমৎকার কাজ করে। এছাড়া নিম কৃমিনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অনেকে নিয়মিত নিম পাতা চিবিয়ে খান, যা মুখের ব্যাকটেরিয়া কমিয়ে দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
তুলসী: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
তুলসী শুধু একটি পবিত্র গাছই নয়, এটি একটি শক্তিশালী ঔষধি উদ্ভিদও। তুলসী পাতায় থাকা ইউজেনল নামক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি, জ্বর থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতার কাড়া বা চা অত্যন্ত কার্যকর।
শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের জন্য তুলসী বরদান স্বরূপ। রোজ সকালে খালি পেটে ৫-৬টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তুলসীর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ কোষকে ক্ষতিকর মুক্ত অণু থেকে রক্ষা করে।
আমলকী: প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট
আমলকী বা আমলা ভিটামিন সি-এর অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস। একটি আমলায় রয়েছে ৮টি কমলার সমান ভিটামিন সি! এই ফলটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
আমলকী পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমলকীর রস হজমশক্তি বাড়ায় এবং পিত্তজনিত সমস্যা কমায়।
অশ্বগন্ধা: তনাব কমানোর প্রাকৃতিক সমাধান
আধুনিক জীবনে চাপের মধ্যে অশ্বগন্ধা হল একটি প্রাকৃতিক উপশমকারী। এটি শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা ঘুমের মান উন্নত করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে অশ্বগন্ধা বিশেষ কার্যকরী। এটি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়ায় এবং শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান উন্নত করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের শারীরিক দুর্বলতা কমাতেও অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়।
হরিদ্রা: প্রদাহরোধী শক্তি
হলুদ বা হরিদ্রার প্রধান উপাদান কারকুমিন শক্তিশালী প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। এটি আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ঘা-জখম দ্রুত সারাতেও হলুদ ব্যবহার করা হয়।
হলুদ লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করে। দৈনিক এক চামচ হলুদ দুধের সাথে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
বাড়িতে ঔষধি গাছ চাষের সহজ উপায়
শহরে ঔষধি গাছ চাষের কৌশল
আপনার ফ্ল্যাটে বা শহরের ছোট জায়গায় ঔষধি গাছ চাষ করা একটা মজার ব্যাপার! মনে করেন আপনি ছোট্ট বারান্দায় বসে নিজের হাতে তুলে খাচ্ছেন তুলসী পাতা। দারুণ না?
শহরে ঔষধি গাছ চাষের জন্য কন্টেইনার গার্ডেনিং সবচেয়ে ভালো উপায়। পুরনো বালতি, প্লাস্টিকের বোতল, মাটির পট - যা পাবেন তাই ব্যবহার করতে পারেন। টবের তলায় ছিদ্র করতে ভুলবেন না, নাহলে পানি জমে গাছের শিকড় পচে যাবে।
মাটির মিশ্রণ হতে হবে ঠিকমতো। কোকোপিট, বালি আর কম্পোস্ট সমান অনুপাতে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণে গাছ ভালো বাড়বে।
ছাদবাগানে চাষযোগ্য ঔষধি গাছ
ছাদবাগানে এমন ঔষধি গাছ বেছে নিন যেগুলো রোদ পছন্দ করে:
তুলসী - ঠান্ডা-কাশি থেকে শুরু করে জ্বর পর্যন্ত সব রোগে কাজ করে
আলোভেরা - ত্বকের সমস্যা, পোড়া, ব্রণ সবকিছুর জন্য দারুণ
পুদিনা - হজমের সমস্যা, বদহজম আর মাথাব্যথা দূর করে
পাথরকুচি - লিভারের সমস্যা, জন্ডিস সারাতে ভালো
অশ্বগন্ধা - স্ট্রেস কমাতে, ঘুমের সমস্যা দূর করতে জুড়ি নেই
ছাদে বাগান করার সময় গাছের ওজন নিয়ে চিন্তা করবেন না। ছোট টবে এসব গাছ দারুণ বাড়ে। রোদ পায় এমন জায়গা বেছে নিন, দিনে অন্তত ৬ ঘন্টা রোদ দরকার।
সাধারণ রোগের জন্য জরুরি ঔষধি গাছ
আমাদের চারপাশে এমন অনেক গাছ আছে যা দিয়ে সহজেই ঘরোয়া চিকিৎসা করা যায়:
জ্বরের জন্য: তুলসী পাতা আর আদা - ৫-৬টা তুলসী পাতা আর একটুকরো আদা দিয়ে চা বানিয়ে খান
পেটের সমস্যায়: পুদিনা আর ধনেপাতা - ভাত খাওয়ার পর চিবিয়ে খান বা পানিতে ফুটিয়ে খান
কাটা-ছেঁড়ায়: আলোভেরা - আলোভেরার জেল সরাসরি লাগান
ঠান্ডা-কাশিতে: বাসক পাতা - চা হিসেবে খেতে পারেন
ঔষধি গাছের যত্ন নেওয়ার সহজ নিয়ম
ঔষধি গাছের যত্ন নেওয়া কঠিন নয়। কয়েকটা সহজ নিয়ম মাথায় রাখুন:
পানি দেওয়া - মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিন, বেশি পানি দিয়ে গাছ মেরে ফেলবেন না
সার দেওয়া - মাসে একবার জৈব সার দিলেই যথেষ্ট
ছাঁটাই করা - নিয়মিত পুরনো পাতা ছেঁটে দিন, নতুন পাতা বেশি আসবে
কীটপতঙ্গ - নিমের তেল মিশ্রিত পানি স্প্রে করুন
মনে রাখবেন, ঔষধি গাছ থেকে সেরা ফল পেতে হলে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক একদম ব্যবহার করবেন না। নিজের হাতে লাগানো বিশুদ্ধ ঔষধি গাছ আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে, পরিবেশও বাঁচবে।
ঔষধি গাছ থেকে প্রাকৃতিক ওষুধ তৈরির পদ্ধতি
ঔষধি গাছের পাতা থেকে চা প্রস্তুত
ঔষধি গাছের পাতা থেকে চা বানানো একটি সহজ প্রক্রিয়া। আপনি আদা, তুলসী, নিম, পুদিনা বা আমলকী পাতা থেকে চমৎকার চা বানাতে পারেন। সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতিটি হল:
তাজা পাতা সংগ্রহ করুন (প্রায় 10-15 পাতা)
ভালো করে ধুয়ে নিন
2 কাপ পানি ফুটিয়ে নিন
পাতাগুলো পানিতে দিয়ে 5-7 মিনিট ফুটতে দিন
মধু দিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন
তুলসীর চা শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি দূর করে। নিম চা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কাঁচা ঔষধি গাছের সেবন পদ্ধতি
অনেক ঔষধি গাছই কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত খাবারের আগে খালি পেটে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী পাতা: সকালে 5-7টি পাতা চিবিয়ে খান। কফ, ঠাণ্ডা-জ্বর দূর করে।
আমলকী: টুকরো করে খান বা রস করে পান করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
অর্জুন: ছালের গুঁড়া এক চা চামচ দুধের সাথে খান। হৃদরোগের উপকারী।
হলুদ: দুধে মিশিয়ে খেলে ত্বকের সমস্যা দূর হয়, শরীরের প্রদাহ কমায়।
খেয়াল রাখবেন, কিছু ঔষধি গাছ বেশি মাত্রায় খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। শুরুতে অল্প পরিমাণে শুরু করুন।
ঔষধি গাছের মলম ও তেল তৈরির কৌশল
মলম তৈরির সহজ পদ্ধতি:
ঔষধি গাছের পাতা/ফুল চূর্ণ করুন
মৌমাছির মোম বা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে আঁচে গরম করুন
মিশ্রণ ঠাণ্ডা হলে পাত্রে সংরক্ষণ করুন
নিমের মলম ত্বকের সংক্রমণে, আলোভেরা মলম পোড়া ও ক্ষতের জন্য দারুণ।
ঔষধি তেল বানানোর পদ্ধতি:
ঔষধি উপাদান (যেমন তুলসী/আদা) কুচি করুন
নারিকেল বা সরিষার তেলে ভিজিয়ে রাখুন 1-2 সপ্তাহ
রোদে রাখুন প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা
ছেঁকে নিয়ে বোতলে সংরক্ষণ করুন
তুলসী তেল মাথার যন্ত্রণা কমায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আদা তেল পেশী ব্যথা কমাতে দারুণ কাজ করে।
ঔষধি গাছের চিকিৎসাগত উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঔষধি গাছ অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার নিয়মিত ব্যবহার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে ৫-৬টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকা যায়।
আদা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে বা আদা চা পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
হলুদের কথা কে না জানে? এর মধ্যে থাকা কারকুমিন নামক উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেলে ইমিউনিটি বাড়ে।
নিম গাছের পাতা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। নিমের কাঁচি পাতা বেটে রস বের করে সেটা মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতার জন্য ঔষধি গাছ
দীর্ঘায়ু এবং সুস্থতার জন্য ঔষধি গাছগুলো মানুষের জীবনে অমূল্য সম্পদ। আমলকি ভিটামিন সি এর প্রাকৃতিক উৎস। নিয়মিত আমলকি খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, চুল পড়া কমে এবং জীবনীশক্তি বাড়ে।
অশ্বগন্ধা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ। এটি শরীরে স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়তা করে।
শতমূলী দীর্ঘায়ু বাড়ানোর জন্য বিখ্যাত। এটি শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ব্রাহ্মী পাতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্রাহ্মী পাতার রস খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।
অর্জুন গাছের ছাল হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ঔষধি গাছের ভূমিকা
আজকাল মানসিক চাপ আর উদ্বেগ অনেকেরই সমস্যা। ঔষধি গাছগুলো এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। শঙ্খপুষ্পি আয়ুর্বেদে মস্তিষ্কের টনিক হিসেবে পরিচিত। এর নিয়মিত ব্যবহার উদ্বেগ কমায় এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
লেবুর গন্ধ মন ভালো করে তোলে। লেবু গাছের পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে মানসিক চাপ কমে এবং মেজাজ ভালো হয়।
তুলসী শুধু শারীরিক রোগেই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও উপকারী। এর সুগন্ধ মন প্রফুল্ল রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
বিড়ালীকরঞ্জ বা গোটুকোলা ব্যবহার করা হয় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে। এটি নিয়মিত খেলে মানসিক চাপ কমে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
পুদিনা পাতা থেকে তৈরি চা পান করলে মাথা ঠান্ডা হয় এবং মানসিক শান্তি আসে। এটি তাৎক্ষণিকভাবে মন ভালো করে তোলে।
উপসংহারঃ
আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যন্ত, ঔষধি গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রজাতিগুলি শুধু রোগ নিরাময়েই নয়, বরং সুস্থতা বজায় রাখতেও অত্যন্ত কার্যকরী। নিম, তুলসী, আদা, হলুদের মতো শক্তিশালী ঔষধি গাছ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সাহায্য করে আসছে।
নিজের বাড়ির ছোট বাগানে ঔষধি গাছ লাগিয়ে আপনিও এই প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা নিতে পারেন। সহজ পদ্ধতিতে এসব গাছ থেকে ঘরোয়া ওষুধ তৈরি করে আপনি ও আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। প্রকৃতির এই অমূল্য উপহারগুলি সংরক্ষণ করা ও ব্যবহার করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আসুন, ঔষধি গাছের মাধ্যমে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে আমাদের জীবনযাত্রার অংশ করে তুলি।
আরো পড়ুন :-
জল দূষন (water pollution )
CORD BLOOD BANKING SREVICES.
BEST PLACE VISITE IN TARAPITH
Caused and effect of sound pollution
POST টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।POST টি যদি ভালো লেগে থাকলে comment ও share করার অনুরোধ রইল।
কোন মন্তব্য নেই