ভিটামিন (Vitamin)
ভিটামিন (Vitamin)
ভিটামিন (Vitamin):
প্রত্যেক জীবদেহে অনবরত নানা ধরনের জৈবিক ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে ।এইসব জৈবিক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন ,এই শক্তির উৎস হল খাদ্য ।খাদ্যে থাকে স্থৈতিক শক্তি যা দেহকোষে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাপ শক্তি ও গতিশক্তি তে রূপান্তরিত হয় এবং জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হয় ।জীব তার নিজের প্রয়োজনমতো পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে ও সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকে।কিন্তু উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলেও জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি ব্যাহত হয় এমনকীজীবের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে ,তাপ্রথম 1881খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী লুলিন (Luline)লক্ষ্য করেন । তিনি দেখেন যে জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য বিশেষ এক ধরনের খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন । বিজ্ঞানী হপকিনস (Hopkins) বিশেষ ধরনের খাদ্য উপাদানকে বলেন “অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান" ।1912 খ্রিস্টাব্দে ক্যাসিমির ফাঙ্ক এই খাদ্য উপাদান কে ভিটামিন (vitamine) নাম দেন ।ধানের কুঁড়া থেকে বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ একপ্রকার শক্তিশালী যৌগ কে আলাদা করে তাকে কেলাসিত করতে সক্ষম হন অধ্যাপক জে,সি,ড্রামমণ্ড (J,C,Drummond) ।1920 খ্রিস্টাব্দে ভিটামিন (vitamine)শব্দ থেকে ই(E) অক্ষরটি বাদ দেন এ শক্তিশালী যৌগ গুলিকে ভাইটামিন বলে অভিহিত করেন ।
সংজ্ঞা (Definition)-
সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে যে বিশেষ জৈব পরিপোষক জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ,পুষ্টিতে সহায়তা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকে ভিটামিন (vitamin)বলে ।
দ্রব্যতা অনুসারে ভিটামিনের শ্রেণীবিভাগ:-
তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন (Fat soluble vitamin)-
ভিটামিনএ , ভিটামিন ডি,ভিটামিন ই , ভিটামিন কে।
জলে দ্রবণীয় ভিটামিন(Water soluble vitamin) -
ভিটামিন বি,ভিটামিন সি ,এবং ভিটামিন পি ।
বৈশিষ্ট্য(Character):-
- অন্যান্য খাদ্য উপাদানে তুলনায় ভিটামিনের চাহিদা খুবই কম,
- এক রকম সরল খাদ্য উপাদান
- ভিটামিন বিপাক ক্রিয়ায় বিনষ্ট হয়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে
- একরকমের জৈব অনুঘটক
- ভিটামিন সাধারণ খাদ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে ।
ভিটামিন এ (Vitamin –A)
রাসায়নিক নাম -রেটিনল
আবিষ্কারক –ম্যাককালাম,টি অসবর্ণ ,ডেভিস (USA 1913)
দৈনিক চাহিদা –
প্রাপ্তবয়স্ক –750µg
শিশু-250-600µg
উদ্ভিজ্জ উৎস-
গাজর, পেঁপে ,পাকা আম ,তরমুজ ,সবুজ শাকসবজি তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ উৎসে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন (প্রো ভিটামিন) থাকে ।
প্রাণিজ উৎস – কড,হাঙ্গর মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ,দুধ,ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
মানবদেহে ভূমিকা –
প্রাণীর দেহ বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। চোখের রড কোশের রোডপসিন নামক রঙ্গক গঠন করে। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। জিহ্বা ও শ্বাসনালীর আবরণী কলা বৃদ্ধি ও সক্রিয়তা বজায় রাখে। আবরণী কলার গঠন বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখে।
অভাবজনিত লক্ষণ-
1. দেহ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, 2.রাতকানা বা নিক্টালোপিয়া(Nyctalopia) রোগ হয়, 3.জেরপথ্যালমিয়া()রোগ হয়, 4.কেরাটোম্যালশিয়া রোগ হয়, 5.ফিনোডার্মা(Phrynoderma) বা টোড স্কিন রোগ হয় ।
ভিটামিন ডি (Vitamin – D)
রাসায়নিক নাম –ক্যালসিফেরোল
আবিষ্কারক -এলামার ম্যাক কোলাম (1924)
দৈনিক চাহিদা – প্রাপ্ত বয়স্ক- 2.5g, শিশু- 5g
উদ্ভিজ্জ উৎস:-
থেকে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
প্রাণিজ উৎস:-
তেল, দুধ ,মাখন ,ডিম ,সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিথেকে মানব ত্বকে সংশ্লেষিত হয়।মানবদেহে ভূমিকা-
দুধ |
অভাবজনিত লক্ষনঃ-
1.ভিটামিন ডি (Vitamin – D) এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হয়।
2. ভিটামিন ডি (Vitamin – D) এর অভাবে বড়দের অস্টিওম্যালেসিয়া(Osteomalacia)রোগ হয় ,যাতে চট করে হাড় ভেঙে যায়।
ভিটামিন ই (Vitamin – E)
রাসায়নিক নাম –টেকোফেরল
আবিষ্কারক –এইচ এম ইভান্স,বিশপ (1913)
দৈনিক চাহিদা ,প্রাপ্ত বয়স্ক- 25mg
দৈনিক চাহিদা , শিশু- 10-20 mg
উদ্ভিজ্জ উৎস:- গম,সয়াবিন,অঙ্কুরিত ছোলা,উদ্ভিজ তেল,বাদাম,মটরশুটি,লেটুস ও অন্যান্ন শাক ইত্যাদি।
প্রাণিজ উৎস- খুব কম পরিমানে যকৃতে থাকে ।
মানবদেহে ভূমিকা-
1.জারন প্রতিরোধকরূপে কাজ করে। 2.জরায়ুর ভ্রুণের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 3.বন্ধ্যাত্ব রোধ করে। 4. গর্ভপাত রোধ করে । 5.পেশির সক্রিয়তা বজায় রাখে ।
অভাবজনিত লক্ষনঃ-
স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই অভাবে বন্ধ্যাত্ব হয়।
ভিটামিন কে (Vitamin – K)
রাসায়নিক নাম – ন্যাপথাকুইনোন
আবিষ্কারক – কার্ল পিটার হেনরিক (1934)
দৈনিক চাহিদা – প্রাপ্ত বয়স্ক- 140mg,শিশু- 30-60 mg
উদ্ভিজ্জ উৎস:- ফুলকপি ,বাঁধাকপি ,টমাটো ,পালং শাক ইত্যাদি ।
প্রাণিজ উৎস:- মাছ ,মাংস ,ডিম ,শুকরের যকৃত নিঃসৃত তেল ইত্যাদি ।
মানবদেহে ভূমিকা-
রক্ত তঞ্চনে সাহায্যকারী উপাদান প্রোথ্রম্বিন এবং ফ্যাক্টর viii উৎপাদনে সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষনঃ-
1.রক্ত তঞ্চন পক্রিয়া ব্যাহত হয়। 2.রক্ত ক্ষরন ঘটে। 3. পিত্ত ক্ষরন পক্রিয়া ব্যাহত হয়।
জলে দ্রবনীয় ভিটামিন
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin –B complex )
রাসায়নিক নাম – B1-থিয়ামিন
B2-রাইবোফ্লেভিন
B5-নিয়াসিন
B6-পাইরিডাক্সিন
B12-সায়ানোক্লোবামিন
উদ্ভিজ্জ উৎস:
ইস্ট,শিম ,বাদাম ,টমেটো ,পালং শাক ,ঢেকিছাঁটা চাল ,আটা ,বরবটি ও বিভিন্ন ফল ইত্যাদি ।প্রাণিজ উৎস:
দুধ ,ডিমের কুসুম ,পাঁঠার যকৃৎ ,পনির ,মাংস ইত্যাদি ।
মানবদেহে ভূমিকা-
1.শর্করা বিপাকে সাহায্য করে ।2.পেলেগ্রা প্রতিরোধ করে। 3.বৃদ্ধি ও বিপাক নিয়ন্ত্রন করে ।4.স্নায়ু উদ্দীপনা প্রেরনে সাহায্য করে ।
অভাবজনিত লক্ষনঃ-
1.আর্দ্র বেরিবেরি ও শুষ্ক বেরিবেরি রোগ হয় ভিটামিন B1অভাবে । 2.চেইলোসিস ও গ্লসাইটোসিস অর্থাৎ মুখ ও ঠোঁটে ঘা হয় ভিটামিন B2অভাবে ।3.পেলেগ্রা রোগ হয় ভিটামিন B5অভাবে । 5. এছাড়া রক্তাল্পতা , চুল পড়া ,স্নায়ু দৈর্বাল্য ইত্যাদি রোগ ভিটামিন B complexঅভাবে হয় ।
ভিটামিন সি (Vitamin - C)
রাসায়নিক নাম- অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
আবিষ্কারক –অ্যালবার্ট সেন্ট জার্জ (1928)
দৈনিক চাহিদা –প্রাপ্ত বয়স্ক - 50mg, শিশু- 20-40 mg
উদ্ভিজ্জ উৎস:-
আমলকী, লেবু ,আম,পেয়ার, টক জাতীয় ফল,টমাটো ,কাঁচালঙ্কা , পেঁপে ইত্যদি।প্রাণিজ উৎসঃ-
গরুর কাঁচা দুধে খুব সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সিথাকে।
গরুর কাঁচা দুধে খুব সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সিথাকে।
মানবদেহে ভূমিকা-
দাঁতের ও হাড়ের ক্যালশিয়াম জমতে সাহায্য করে। RBC উৎপাদনে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অভাবজনিত লক্ষনঃ- স্কার্ভি রোগ হয়,রক্তাল্পতা দেখা দেয়,দেহের অনাক্রম্যতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
5. ভিটামিন সম্বন্বধীয় কিছু প্রশ্ন ও উত্তর -
- উদ্ভিদ কোথা থেকে ভিটামিন পেয়ে থাকে? Ans. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজ থেকে নিজদেহে ভিটামিন সংশ্লেষ করে উদ্ভিদ ভিটামিন পেয়ে থাকে।
- কোন ভিটামিনের অভাবে রক্ততঞ্চন ব্যাহত হয়? Ans. ভিটামিন K
- জলে দ্রাব্য একটি ভিটামিনের নাম করো। Ans. ভিটামিন C।
- স্নেহ পদার্থে দ্রবণীয় একটি ভিটামিনের নাম করো। Ans. ভিটামিন A
- ভিটামিন 'C' র অভাবজনিত একটি লক্ষণ উল্লেখ করোAns. ভিটামিন ‘C'র অভাবে স্কার্ভি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়, ফলে দাঁত দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
- পলিনিউরাইটিস কী? Ans. প্রান্তীয় স্নায়ুর প্রদাহজনিত রোগকে পলিনিউরাইটিস বলে। ভিটামিন B1-এর অভাবে এইরোগ হয়।
- সুর্যালোকের উপস্থিতিতে আমাদের শরীরে কোন ভিটামিন তৈরি হয়? Ans, ভিটামিন-D
- মানবদেহে সংশ্লেষিত হয় এমন একটি ভিটামিনের নাম কী ? Ans. ভিটামিন D
- (এই ভিটামিন সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সহায়তায় মানুষের ত্বকে সংশ্লেষিত হয়)।
- মানবদেহে কোন কোন ভিটামিন সংশ্লেষিত হতে পারে? Ans, ভিটামিন D, A ও B12
- রেটিনার রড কোশ গঠনে সাহায্য করে কোন ভিটামিন? Ans. ভিটামিন A
- কোন ভিটামিন রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়? Ans. ভিটামিন C
- কড় মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেলে কোন ভিটামিন পাওয়া যায়? Ans. ভিটামিন A এবং D
- টেকি ছাটা চাল এবং লাল আটায় কোন ভিটামিন পাওয়া যায়? Ans. ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স।
- টক জাতীয় টাটকা ফলে কোন ভিটামিন পাওয়া যায়? Ans. ভিটামিন C
- আলফালফা শাক এবং শূকরের যকৃৎ নিঃসৃত তেলে কোন ভিটামিন পাওয়া যায়? Ans. Fernista K
- লেটুস শাক ও গমের অঙ্কুর নিঃসৃত তেলে কোন ভিটামিন পাওয়া যায়? Ans. ভিটামিন E
- এমন কয়েকটি খাদ্যের নাম কর যেখানে প্রায় সব ভিটামিনই পাওয়া যায়? Ans. দুধ, টাটকা পালংশাক, টম্যাটো, পেয়ারা ইত্যাদি।
- রাতকানা রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়?Ans. ভিটামিন A
- রিকেট কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? Ans. ভিটামিন D।
- বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? Ans. ভিটামিন E।
- গ্লসাইটিস কী Ans. ভিটামিন B2 অভাবে জিভে ঘা হয়ে জিভের রং টকটকে লাল হয়ে যায়, একে গ্লসাইটিস বলে।
- সেবোরিক ডার্মাটাইটিস কী? Ans. ভিটামিন B2- বা রাইবোফ্লোভিনের অভাবে চোখ লালা হয়, চোখ জ্বালা করে, নাক ও ঠোঁটের কোনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দাগ পড়ে, একে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলে।
- রক্তক্ষরণ বা হেমারেজ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? Ans. feutrama KI
- বেরিবেরি কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? | Ans. ভিটামিন B
- স্টোমাটাইটিস বা মুখে-ঘা কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? Ans. ভিটামিন B2
- রক্তাপ্লতা বা অ্যানিমিয়া কোন ভিটামিনের অভাবে হয় ? Ans, ভিটামিন B12
- পেলেগ্রা কোন ভিটামিনের অভাবে হয় ? Ans. নিয়াসিন বা BS
- স্কার্ভি কোন ভিটামিনের অভাবে হয়? Ans, ভিটামিন C
- ভিটামিন A-র রাসায়নিক নাম কী? Ans. রেটিনল
- ভিটামিন D-র রাসায়নিক নাম কী? Ans. ক্যালসিফেরল
- ভিটামিন E-র রাসায়নিক নাম কী? Ans. টোকোফেরল
- ভিটামিন K-র রাসায়নিক নাম কী? Ans. ফাইলোকুইনন বা ন্যাপথোকুইনন
- ভিটামিন C-র রাসায়নিক নাম কী? Ans. অ্যাসকরবিক অ্যাসিড।
- ভিটামিন B12-এর রাসায়নিক নাম কী? Ans. সায়ানোকোবালামিন
- ভিটামিন B2-র রাসায়নিক নাম কী ? Ans. রাইবোফ্লাভিন
- ভিটামিন B1-এর রাসায়নিক নাম কী? Ans. থিয়ামিন
- ভিটামিন A, D, E, K কোন ধরনের দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়? Ans. ভিটামিন A, D, E, K ফ্যাটে বা স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত হয়।
- একটি পরজীবী উদ্ভিদের না
POST টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
POST টি যদি ভালো লেগে থাকলে COMMENT & SHARE করার অনুরোধ রইল।
তথ্য সূত্র-
1.উচ্চত্তর জীববিদ্যা- সেন,মিদ্যা ও সাঁতরা
2.জীবনবিজ্ঞান ও পরিবেশ - ছায়া প্রকাশনী
ও ইন্টারনেট সার্চ ।
1.উচ্চত্তর জীববিদ্যা- সেন,মিদ্যা ও সাঁতরা
2.জীবনবিজ্ঞান ও পরিবেশ - ছায়া প্রকাশনী
ও ইন্টারনেট সার্চ ।
Good post.useful post
ReplyDelete[…] ALSO READ : ভিটামিন (Vitamin) […]
ReplyDelete