কাজ ও খেলা ও খেলাভিত্তিক শিক্ষা (Work and Play and Play based Education )
কাজ ও খেলা ও খেলাভিত্তিক শিক্ষা (Work and Play and Play based Education )
আমরা জানব কাজ ও খেলা (Work and Play), খেলার প্রকৃত অর্থ এবং সংজ্ঞা (Meaning and Concept of Play), খেলা ও কাজ এবং পরিবেশবিদ্যা (Work and Play & EVS) , খেলার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে ( Characteristics of Play), খেলাভিত্তিক শিক্ষা (Play-based Education) , শিক্ষাকে খেলাভিত্তিক করার উপায় ( Way to Play-based Education) ,কাজ ও খেলার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teachers in Play and Work)
খেলার প্রকৃত অর্থ এবং সংজ্ঞা (Meaning and Concept of Play):
ম্যাকডুগাল বলেছেন, আমাদের মধ্যে যেসব সহজাত প্রবণতা (Instinct) আছে সেগুলি যদি তার স্বাভাবিক পথে প্রবাহিত না হয়ে সমাজ সমর্থিত কোনো পথে বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাকেই খেলা বলে। অর্থাৎ খেলা হল জীবনীশক্তির বহিঃপ্রকাশ।
গুলিক (Gullick)-এর মতে, নিজের ইচ্ছা অনুসারে স্বাধীনভাবে যা কিছু করি তাই হল খেলা অর্থাৎ খেলা হল স্বতঃস্ফুর্ত কাজ।
ভ্যালেনটাইন-এর মতে, আনন্দদায়ী কাজই হল খেলা। শিশু খেলার মধ্যে যে আনন্দ পায় তা অন্য কিছুতে পায় না। তাই সে খেলতে চায়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, কাজ = দায়িত্ব ও কর্তব্য। খেলা = দায়িত্বের মধ্যে থেকে আনন্দ উপভোগ।
খেলা ও কাজ এবং পরিবেশবিদ্যা (Work and Play & EVS) :
খেলা এবং কাজ-এর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হল কাজের সময় কাজ করতে হয় এবং খেলার সময় খেলা কিন্তু আধুনিক শিক্ষাবিদগণ উপরোক্ত বক্তব্যের উলটো কথা বলেছেন। তাঁদের মতে—খেলার সঙ্গে কাজ, কাজের সঙ্গে খেলা, অর্থাৎ খেলা ও কাজ বা কাজ ও খেলা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
শিশু সাধারণত খেলাই পছন্দ করে, তাই বর্তমান শিক্ষাবিদগণ মনে করেন খেলার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে যে সক্রিয়তা দেখা যায়, তাকে কেন্দ্র করেই শিক্ষা দিতে হবে। খেলার মাধ্যমেই শিশুর দেহমনের বৃদ্ধি ঘটে। খেলা হল একটি সর্বজনীন ব্যাপার, সব জায়গায়, সবদেশের ছেলেমেয়েরা খেলতে
ভালোবাসে । খেলা হল শিশু বা ব্যক্তির সর্বজনীন স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীন, আনন্দদায়ক সৃজনধর্মী স্বভাবগত আচরণ।
Related search west bengal tet practice set 1
খেলার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে, (Characteristics of Play) : এগুলি হল—
(1) খেলা হল শিশুর একপ্রকার স্বাধীন আচরণ। শিশু স্বাধীনভাবে খেলা করতে ভালোবাসে। কোনো বাধাকে সে পাত্তা দেয় না।
(2) খেলার মধ্য দিয়ে শিশু নতুন কিছু সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে, শিশুর কাছে এরমূল্য অনেক। শিক্ষকের লক্ষ্যও হল শিশু যাতে নতুন কিছু সৃষ্টি করে।
(3) খেলা শিশুর একটি স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ। খেলার জন্য শিশুকে অনুরোধ করতে হয় না। শিশু কখন কীভাবে খেলবে এবং তার মধ্য দিয়ে আনন্দ পাবে, এ সবকিছুই তার নিজস্ব ব্যাপার।
(4) খেলা শিশুকে আনন্দ দেয়।
(5) খেলার মধ্য দিয়ে শিশু নানা অভিজ্ঞতা লাভ করে নানা কৌশল আয়ত্ত করে। সেইজন্য খেলাকে আধুনিককালে শিক্ষার ক্ষেত্রে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(6) খেলার মধ্য দিয়ে শিশু সহযোগিতা, সহমর্মিতা লাভ করে এগুলি সবই হল সামাজিক গুণ। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, শৃঙ্খলাও আয়ত্ত করে শিশু।
(7) খেলা শিশুকে আত্মতৃপ্তি দান করে, যদি সে সফল হয়।
Related search west bengal tet practice set 1
খেলাভিত্তিক শিক্ষা (Play-based
Education) :
কান্ডওয়েল কুকনামে একজন শিক্ষাবিদ প্রথম, ‘খেলাভিত্তিক শিক্ষা’ কথাটি ব্যবহার করেন। খেলা হল একটি স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দদায়ক কাজ। আগ্রহ, ইচ্ছে, আনন্দ, স্বতঃস্ফূর্ততা ইত্যাদি খেলার বৈশিষ্ট্যগুলি যখন শিশুর শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তাকে খেলাভিত্তিক । শিক্ষা বলা হয়। খেলাভিত্তিক শিক্ষা কোনো বিশেষ শিক্ষণ পদ্ধতি নয়। যে-কোনো শিক্ষাদান ব্যবস্থা অথবা শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যে যদি খেলার আকর্ষণীয় উপাদানগুলি থাকে তাকেই আমরা খেলাভিত্তিক পদ্ধতি বলে থাকি। রুশো, পেস্তালৎসি, ফ্রয়েবেল, মন্তেসরি, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ শিক্ষাবিদ খেলাভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতির কথা বলেছেন।
উদাহরণ : খেলার মাঠ পরিষ্কার ।
শিক্ষাকে খেলাভিত্তিক করার উপায় (Way to Play-based
Education):
শিক্ষাকে খেলার মধ্য দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করতে। হবে। এর জন্য প্রয়োজনমতো হাতের কাজ, অভিনয়, সংগীতের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাকে খেলাভিত্তিক করতে হলে কয়েকটি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন— (ক) চার্ট, ছবি, মডেল ও অন্যান্য প্রদীপনের সাহায্যে শিক্ষাদান পদ্ধতিকে যথেষ্ট | আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। (খ) পাঠক্রমকে শিশুর আগ্রহভিত্তিক হতে হবে।
কাজ ও খেলার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা(Role of Teachers in Play and Work) :
এখন প্রশ্ন হল কত কাজ এবং কত খেলার সাথে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে? অনেক শিক্ষাবিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সকল শিক্ষণীয় বিষয় খেলার ছলে শেখাতে হবে, শিক্ষক এই ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকবেন বা শিক্ষকের ভূমিকা হবে গৌণ, তবে কখনোই খেলাধুলাকে শিক্ষার থেকে আলাদা করা যাবে না। শিক্ষক কাজ এবং খেলা উভয় বিষয়কেই গুরুত্ব দেবেন এবং মতামত দেবেন। National Association for the Education of Young Children
(NAEYE) তাদের প্রস্তাবে বলেছে যে, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় সক্রিয়তায় সঙ্গে অংশ নেবে এবং যেখানে তারা স্বাভাবিক মনে করবে সেখানেই তারা অংশ নেবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাজকে সমর্থন করবেন, কিন্তু কখনোই তা সরাসরি নয়।
খেলা ও কাজের মধ্যে পার্থক্যগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল—
কাজ --
বাধ্যবাধকতা আছে শিশুকে কাজ করতে বলা যায়।
2.কাজের জন্য বাহ্যিক প্রেষণার প্রয়োজন হয়। প্রেষণাই এখানে কার্যকরী।
3. কাজের ক্ষেত্রে সবসময় বস্তুধর্মী উদ্দেশ্য থাকে।
4. কাজের শক্তি জোগায় চাহিদা বা অভাববোধ।
5. কাজের শৃঙ্খলা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
6. কাজ সবসময় আনন্দদায়ক হয় না।
7. কাজের একটা অর্থনৈতিক দিক আছে।
৪.
কাজে ক্লান্তি সহজে আসে।
9. কাজে মানসিক অবসাদ দেখা যায়।
10. কাজে সেইভাবে শরীরচর্চা হয় না।
11. কাজে বৌদ্ধিক অনুশীলনের সুযোগ বেশি।
খেলা---
. খেলা স্বতঃস্ফূর্ত
কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, শিশু নিজের ইচ্ছায় খেলা করে |
2.শিশু যখন নিজের ইচ্ছায় কাজ করে, তখন তা খেলায় পরিণত হয়।
3. খেলার জন্য কোনোবাহ্যিক প্রেষণার প্রয়োজন হয় না
|
4. খেলায় বৌদ্ধিক অনুশীলনের সুযোগ কম।
5. খেলায় শরীরচর্চা হয়।
6. খেলায় মানসিক অবসাদ আসে না।
7. খেলায় ক্লান্তি সহজে আসে না।
8. খেলা অর্থ উপার্জনের উপায় নয়।
9. খেলার শক্তি জোগায় অভ্যন্তরীণ প্রেরণা।
10. খেলায় শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফুর্ত।।
11. খেলার কোনো বস্তুধর্মী উদ্দেশ্য থাকে না।
Related search west bengal board primary class iii exam question.
কোন মন্তব্য নেই